Monday, February 28, 2011

ঝিনাইদহে আ'লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ


 ঝিনাইদহে রোববার বিকালে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের সমাবেশ পন্ড হয়ে গেছে। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হবার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ১০ জন ও বাকিরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন।
আহতরা হচ্ছেন- শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন, ইউপি সভাপতি আলাউদ্দীন, মতিউর রহমান, পাশান, সোহেল, বাবলু, রফিকুল ইসলাম, নূর মোহাম্মদ, ঠান্ডু, তরিকুল ইসলাম ও আব্দুল লতিফ। আহতদের মধ্যে ২ জন মিন্টু ও বাকিরা খালেক গ্রুপের সমর্থক বলে জানা গেছে।
সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ৫টি টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। এ সময় সভামঞ্চ ও ৮টি মোটরসাইকেল, বেশ কিছু টেম্পু ভাংচুর ও প্রতিপক্ষ আব্দুল খালেকের ব্যানার এবং পোস্টারে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মোঃ ইকবাল বাহার জানান, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ মঞ্চে আসন গ্রহণ করার পর পরই আওয়ামী লীগের আব্দুল খালেক গ্রুপের লোকজন মঞ্চের সামনে আসার চেষ্টা করেন।
এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে তারা হৈ চৈ শুরু করেন। ওসি জানান, সেখান থেকেই মূলত সংঘর্ষের সূত্রপাত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঞ্চের সামনে উপস্থিত কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইদুল করিম মিন্টুর সমর্থকরা এ সময় হৈ চৈ থামানোর চেষ্টা করলে তাদের সাথে খালেক গ্রুপের লোকজনের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়ে যায়।
দুই পক্ষের মারমুখী আচরণ ও চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়িতে সমাবেশস্থল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল আলম হানিফ ও ঝিনাইদহের ৩ জন এমপির সামনেই দলীয় নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে হানিফসহ আগত অতিথিরা দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যান।
এ সময় লাঠিসোটা নিয়ে একদল কর্মী মঞ্চ দখল করে নেয় এবং মঞ্চের পাশে থাকা উপজেলা চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস ও পৌর মেয়র প্রার্থী আব্দুল খালেকের ব্যানার ও পোস্টার ছিঁড়ে তাতে অগ্নিসংযোগ করে।
সংঘর্ষের ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার মেয়র প্রার্থী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইদুল করিম মিন্টু জানান, তার প্রতিপক্ষ আব্দুল খালেক এই সংঘর্ষের জন্য দায়ী নন। তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় খালেক তার সঙ্গে ছিলেন। তিনি সমাবেশ পন্ড করার জন্য সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস ও ভাইস চেয়ারম্যান জেড এম রাশিদুল আলমকে দায়ী করেন।
বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়র প্রার্থী ও জেলা আওয়মী লীগ নেতা আব্দুল খালেক জানান, তিনি সংঘর্ষের জন্য দায়ী নন। তার কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যেতে চাইলে পুলিশ ও প্রতিপক্ষ মিন্টুর লোকজন হামলা চালিয়ে তারাই সমাবেশ পন্ড করার পরিবেশ তৈরি করে। সংঘর্ষে তার ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
সংঘর্ষের সময় মঞ্চে উপস্থিত ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি এড শফিকুল ইজম খান চঞ্চল জানান, কোন ভাবেই সমাবেশে মারামারি করা ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, পৌর মেয়র নির্বাচনে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত যায় হোক এই মারামারিতে আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি জানান, সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ হাই কমান্ডের ফোন পেয়ে ঝিনাইদহ সার্কিট হাউস ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ডিউটি অফিসার এসআই কামরুজ্জামান জানান, হামলার বিষয়ে থানায় এখনো কেউ মামলা করেনি। শহরে এখনো উত্তেজনা থাকায় পুলিশ এখন খুব ব্যস্ত বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর সহিংসতার কারণে বাতিল হওয়া ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাইদুল করিম মিন্টু ও আব্দুল খালেক প্রতিদ্বনিদ্বতা করছেন। রোববারের সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থিতা ঘোষণার গুজব ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়।