Friday, February 25, 2011

সবার আগে মানবাধিকারের ঘোষণা দিয়েছেন মহানবী (সা.)


হজরত মোহাম্মদের (সা.) ভাষণসমূহ : একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সমীক্ষা’ শিরোনামে থিসিস করেছেন ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তার থিসিসের বিষয়-বৈশিষ্ট্য নিয়ে সাক্ষাত্কারে তিনি জানান, বিভিন্ন ভাষণে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) শাশ্বত ও সর্বোচ্চ মানবাধিকারের ঘোষণা পৃথিবীতে সবার আগে দিয়ে গেছেন। মহানবীর (সা.) ভাষণগুলো মানুষ ও মানবতার প্রতি তাঁর স্বর্ণালী অবদানের উজ্জ্বল স্বাক্ষর। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন শরীফ মুহাম্মদ

মানবতার নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের পুরোটাই ছিল মানুষ ও মানবতার স্বর্ণালী আদর্শ ও শিক্ষায় ভরপুর। বাস্তব আচরণ ও ঘটনার বাইরে তাঁর ভাষণ-বক্তব্য থেকেও এর অগণিত নমুনা পাওয়া যায়। ব্যাপকভাবে এ প্রসঙ্গে আমরা শুধু বিদায় হজের ভাষণের কথাই জানি ও আলোচনায় আনি। কিন্তু তাঁর জীবনের প্রায় সব ভাষণ-বক্তব্যেই মানুষ ও মানবতার প্রতি তাঁর অবদানের তথ্যটি ফুটে ওঠে। ‘হজরত মোহাম্মদের (সা.) ভাষণসমূহ : একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সমীক্ষা’ শিরোনামে থিসিস সম্পন্ন করে পিএইচডি অর্জন করা অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এ কথা জানান।
চট্টগ্রাম ওমর গণি এমইএস কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক ড. খালিদকে ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বিষয়ে ডিগ্রিটি দেয়া হয়। ৩৭০ পৃষ্ঠায় রচিত তার থিসিসটিতে রয়েছে আটটি অধ্যায়। থিসিসটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ। পরীক্ষক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবির অধ্যাপক ড. আবু বকর সিদ্দিক ও ভারতের লক্ষেষ্টৗ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামী সভ্যতা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শিব্বির আহমদ। ড. খালিদ জানান, তিনি তার থিসিসে মহানবীর (সা.) ৮১টি ভাষণ সংগ্রহ, ভাষান্তর ও বিশ্লেষণ করেন। ভাষণগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিদায় হজের ভাষণ, মক্কা বিজয়, তাবুক প্রান্তর, গাদির খুম, বদর, ওহুদ প্রান্তর, মদিনার প্রথম ভাষণ, দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্কতা, মুহাজির-আনসারের সমাবেশ, মক্কায় নেতৃস্থানীয়দের জন্য আয়োজিত ভোজসভা, আকাবা উপত্যকা, মসজিদে নববী ও মুতার যোদ্ধাদের বিদায় দানকালে দেয়া ভাষণগুলো।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন জানান, মহানবীর (সা.) ভাষণে সামাজিক নিরাপত্তা, অসাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের প্রেরণা ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা রক্ষার চেতনা প্রস্ফুটিত। এছাড়াও মহানবীর (সা.) ভাষণে রয়েছে ধর্মের সঙ্গে সমাজ-সংস্কৃতির সম্পর্ক, মানবাধিকার, নারীর মর্যাদা ও শিশুর অধিকার, অধীনস্থদের সঙ্গে মানবিক আচরণ, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, যুদ্ধক্ষেত্রে নৈতিকতা, মানবসেবা, ক্ষমা ও ঔদার্য, বাড়াবাড়ি বিষয়ে সতর্কতা, খতমে নবুওয়ত, জিহাদ, সুদমুক্ত অর্থনীতি, আত্মীয়তার সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ, ব্যক্তি ও ব্যাষ্টিক দায়িত্ববোধ, সামাজিক ন্যায়বিচার, দাসমুক্তি, বর্ণ ও গোত্রীয় বৈষম্যের অবসান এবং শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কিত বহুবিধ নির্দেশনা ও আলোকপাত।
মানবাধিকার রক্ষায় মহানবীর (সা.) ভাষণ ও নির্দেশনার ভূমিকা সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিভিন্ন ভাষণের ধারাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মহানবী (সা.) শাশ্বত ও সর্বোচ্চ মানবাধিকারের ঘোষণা সবার আগে দিয়ে গেছেন। ১২১৫ সালের ম্যাগনাকার্টা, ১৬২৮ সালের পিটিশন অব রাইটস, ১৬৭৯ সালের হেবিয়াস কর্পাস অ্যাক্ট, ১৬৮৯ সালের বিল অব রাইটস এবং ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা মানুষের সামনে আসার বহু শত বছর আগেই মানবতার ঝাণ্ডাবাহী মহানবীর (সা.) ভাষণে মানুষের আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার ঘোষিত হয়েছে।
থিসিস সম্পন্ন করতে ড. খালিদ তিনটি দেশের বিভিন্ন ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও লাইব্রেরি মন্থন এবং পৃথিবী বিখ্যাত ইসলামী স্কলারদের সাক্ষাত্কার গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে নির্দিষ্টভাবে ৮৬টি আরবি, ৮৫টি ইংরেজি, ৩০টি উর্দু, ৬টি ফার্সি, ৫টি বাংলা গ্রন্থ ও ১৫টি সাময়িকী অধ্যয়ন করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিরাত বিশ্বকোষের চতুর্দশ খণ্ডে তার থিসিস থেকে নেয়া মহানবীর (সা.) ভাষণগুলো মূল আরবিসহ বাংলা তরজমা ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খুতবাসমূহ’ নামে ছাপা হয়েছে। ষ

আত্মসম্মান বাঁচাতে ঘর থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসার আহবান খালেদার


 আত্মসম্মান বাঁচাতে ঘর থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আকাশে শকুনের আনাগোনা এবং নীচে নেকড়েদের ঘেউ ঘেউ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দেশে নিপীড়ত মানুষ জেগে উঠছে। দেশ আজ সংকটের পথে, ফলে আত্মসম্মান বাঁচাতে ঘর থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে দলের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান। পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত নৃশংস হত্যাকান্ডে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণ করতেই বিএনপি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বিপর্যয়ের আগেই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। চাপের মুখে অসম্মানজনকভাবে বিদায় নিতে না চাইলে অবিলম্বে পদত্যাগ করুণ। মধ্যবর্তী নির্বাচন দিন। অন্যথায় আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ ক্ষমতা ছাড়া করবে।
পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনা থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য বৃহস্পতিবার বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে গানের আয়োজন করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও তিনি সতর্ক করেন।
ভাষা শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পিলখানার মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞে সেনাবাহিনীর যেসব মেধাবী চৌকষ অফিসার সেদিন জীবন দিয়েছিলেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে একের পর এক কলঙ্কের অধ্যায় রচনা করে চলেছে। তারা সরকার গঠনের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ঘটে যায় পিলখানা হত্যাকান্ডের মতো ভয়ঙ্কর বিপর্যয়। এটি এ সরকারের প্রথম এবং আমার বিবেচনায় সবচেয়ে শোচনীয় কলংকজনক ঘটনা। দেশদ্রোহী চক্রের ক্রিড়নক হয়ে মুষ্টিমেয় কিছু বিপথগামী লোক ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের জননন্দিত নির্বাচিত রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছিলো।
তিনি বলেন, দীর্ঘ দিনের রাজপথের অভিজ্ঞতা আমাকে বলে দিচ্ছে উত্তাল আরেকটি দুর্বার আন্দোলনের জন্য সারাদেশেই আজ টান টান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ তৈরি আছে। বাংলাদেশে অনতিবিলম্বে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের মাধ্যমেই কেবল অনিবার্য উত্তাল গণঅভূত্থান পাশ কাটানো সম্ভব।
বেগম জিয়া বলেন, কোনো যুদ্ধের সময় ভিনদেশী আক্রমনকারীরা চরম অপমানের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যে-সব বর্বর পন্থা অবলম্বন করে থাকে, পিলখানায় সে সবই প্রত্যক্ষ করার দুর্ভাগ্য আমাদের হয়েছে। বেগম জিয়া বলেন, দুই বছর পেরিয়ে গেলেও পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায্য বিচার আজো হয়নি। নিশ্চিত এ সরকারের আমলে এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের সুবিচার হবে না। বিচারের নামে হবে প্রহসন। এখন বাংলাদেশে দেশপ্রেমিক সরকারের বিকল্প নেই বলে দাবি করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সীমান্তে প্রতিনিয়ত নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে। ফেলানীর মতো নিস্পাপ কিশোরীদের মৃতদেহ কাঁটাতারে ঝুলছে।
সরকার কেবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দীদের নয়, দেশের সম্মানিত বরেণ্য নাগরিকদেরও অপমান হেনস্থা করছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শাসক পরিবারের এক বরপুত্র হাজার কোটি ডলার লুট করে বিদেশি ব্যাংকে অর্থ জমিয়েছে।
তিউনিশিয়া, মিসর, লিবিয়ায় বিক্ষোভ চলছে বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বেগম জিয়া আরো বলেন, জনগণ রাজপথে নেমে আসলে ঠেকাতে পারবেন না। তাই এখনোও যদি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় না হয় তবে এ সরকারের পরিণতিও ভয়াবহ হবে। খালেদা জিয়া বলেন, আ'লীগ হরতাল ডেকে এদেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা আ'লীগের অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। বিশ্বকাপের জন্য আন্দোলন স্থগিত রেখেছি। তিনি বলেন, মইন উ ফখরুদ্দীন পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন জনগণের সম্মুখে তাদের বিচার হবে। রিমান্ড বন্ধ করে তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, অধ্যাপক মাহাবুব উল্লাহ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ।
(শীর্ষ নিউজ ডটকম/

ত্রিপোলি রক্ষায় মরিয়া গাদ্দাফি


লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি দেশটির পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যখন রাজধানী ত্রিপোলি রক্ষায় মরণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তখন তিনি আন্দোলন বিক্ষোভের সব দায় ওসামা বিন লাদেন ও তার আল-কায়েদার উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। গাদ্দাফি বলেছেন, আল-কায়েদা দেশের তরুণদের বিভ্রান্ত করে বিপথে চালিত করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় টিভিতে বিবৃতি দিয়ে গাদ্দাফি এই দাবি করেন।

গদি রক্ষায় মরিয়া চেষ্টা করলেও গাদ্দাফি দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। বিক্ষোভকারীরা তবরুক ও বেনগাজীসহ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নগরী নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সেখানকার প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। এমনকি লিবীয় সৈন্যদের একটি বড় অংশ গণঅভু্যত্থানের প্রতি বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিচ্ছে। এর আগে মঙ্গলবার গাদ্দাফি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে তিনি মৃতু্য পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন। তবে লড়াই চালানোর মতো লোক তিনি আর পাচ্ছেন না বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। গাদ্দাফি সরকারের মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তারাও এখন নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছে। তাদের একটি বড় অংশ বিক্ষোভকারীদের দলে যোগও দিয়েছে। গতকালও রাজধানী ত্রিপোলিতে গাদ্দাফির অনুগত বাহিনী, পুলিশ এবং সেনারা বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালায়। অপরদিকে, বিদেশীদের দলে দলে লিবিয়া ছাড়ার ঘটনা অব্যাহত আছে।

আল-কায়েদার অঙ্গীকার ঃ এদিকে, আল-কায়েদার উত্তর আফ্রিকা শাখা লিবিয়ায় মোয়াম্মের গাদ্দাফির বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে সাধ্যমতো সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। আল-কায়েদা ইন দ্য ইসলামিক মাগরেব (একিউআইএম) এক বিবৃতিতে জানায়, 'আমরা আপনাদের সহায়তায় সর্বশক্তিমান আলস্নাহর রহমতে সাধ্যমতো সবকিছু করবো। কারণ আপনারা প্রত্যেক মুসলমানের অধিকার আদায়ের জন্য লড়ছেন যারা আলস্নাহ ও তার রাসুলকে ভালবাসেন।' ওয়েবসাইটে পাঠানো এক বার্তায় একিউআইএম মিসর ও তিউনিসিয়ায় সরকার বিরোধী সফল গণঅভু্যত্থানের প্রশংসা করে বলেছে, ঠক, পাপী ও ঘৃণ্য গাদ্দাফিরও একই পরিণতির সময় এসেছে। আল-কায়দা আরো বলে, 'আমরা লিবিয়ায় বিপস্নবের প্রতি আমাদের সমর্থন জানাচ্ছি এবং আমরা তাদের আশ্বস্ত করছি যে, আমরা তাদের পাশে রয়েছি।'

গাদ্দাফির দাবি ঃ এদিকে, গাদ্দাফি এই এই আন্দোলনের দায় চাপিয়ে দিয়েছে আল-কায়দার উপর। তিনি বলেছেন, আমার দেশের শান্তিপূর্ণ নাগরিকরা এমন সহিংস আচরণ করতে পারে না। তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা এই বিশৃঙ্খলায় জড়িত তাদের সবাইকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। গাদ্দাফি তার বক্তব্যে বলেন, সদ্য বিশ বছরে পা দেয়া তরুণদের এভাবে রাস্তায় নামানোর ক্ষমতা আছে একমাত্র আল-কায়েদার। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত তিনি তাদের বিরুদ্ধে লড়বেন বলে গতকালও ঘোষণা দেন।
ইত্তেফাক ডেস্ক

২০৫ রানেই আটকে গেল বাংলাদেশ


বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অবশেষে ২০৫ রানে অলআউট হয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিত উইকেট হারিয়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। অবশেষে স্বাগতিকরা ৪৯.২ ওভারে টাইগাররা সব উইকেটে ২০৫ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। ইনিংসে বাংলাদেশ ৪৮.৪ ওভাবে ২০০ রান পূর্ণ করে।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিম ও রকিবুল হাসান বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দলীয় ১৪৭ রানে মুশফিক বিদায় নেন। এ দুই জন পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৬১ রান সংগ্রহ করেন। মুশফিক ও রকিবুল ধীর গতিতে রান তুলে ক্রিজ আকড়ে থাকার চেষ্টা চালান। মুশফিক ৬৬ বলে ৩৬ রান করে ডকরেলের বলে আউট হয়েছেন। মুশফিকের পর মোহাম্মদ আশরাফুল মাঠে নামলেও ৬ বল মোকাবেলা করে ১ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। এরপর রকিবুল ব্যক্তিগত ৩৮ রানে রান আউটের শিকার হলে চরমভাবে বিপর্যয়ে পড়ে সাকিব বাহিনী।
যদিও স্বাগতিক দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস ইনিংসের দারুন সূচনা করেন। উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ৬.৩ ওভারেই স্বাগতিকরা ৫৩ রান সংগ্রহ করে। কিন্তু হঠাৎ করেই বাংলাদেশ ইনিংসে ছন্দপতন ঘটে। মাত্র ১৯ রানের ব্যবধানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ওপেনার ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবাল ও জুনায়েদ সিদ্দিকী। এরপর দলীয় ৮৬ রানের মাথায় অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বিদায় নিলে দারুন চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। ব্যক্তিগত ১৬ রানে বোথার বলে কট এন্ড বোল্ড হন সাকিব।
শুক্রবার মিরপুর শেরে-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের বি-গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। ম্যাচটি শুরু হয় স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটায়। বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগার দলপতি সাকিব আল হাসান টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করতে নামেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। এ দুইজন ইনিংসের শুরুতেই চড়াও হন আইরিশ বোলাদের উপর। কিন্ত দলীয় ৫৩ রানে জন মুনির বলে ইমরুল কায়েস বিদায় নিলে টাইগাররা প্রথম উইকেট হারায়। এরপর ব্যাক্তিগত ৩ রানে রান আউট হন জুনায়েদ। আইরিশরা সবচেয়ে বড় আঘাত আনে ৪৪ রান তামিম ইকবালকে ফিরিয়ে দিয়ে। তামিম ৭ চারে ৪৪ রানে যখন আউট হন তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ১১.১ ওভারে ৬৮ রান। তামিমকে আউট করেন আইরিশ বোলার আন্দ্রে বোথা।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ও স্পিনার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের পরিবর্তে খেলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
 ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি (শীর্ষ নিউজ ডটকম)

প্রশিক্ষণ ছাড়াই চালানো যাবে সাবমেরিন


সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক সাবমেরিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার উপযোগী সাবমেরিন তৈরি করেছে যেটি কোনোরকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই চালানো সম্ভব। সমুদ্র তলদেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এই সেমি-সাবমেরিনটি নিয়ে ডুবে থাকা যাবে আট ঘণ্টারও বেশি সময়। খবর ম্যাশএবল-এর।
সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, ইগো কম্প্যাক্ট নামের এই সেমি-সাবমেরিনটি তৈরি করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাওনহেজ।
জানা গেছে, এই সাবমেরিনটি পুরো পানির নিচে ডুবে থাকে না বরং পন্টুনের মতো ভেসে থাকে। সাবমেরিনটির একটি পানিনিরোধী কমপার্টমেন্ট মাঝ বরাবর পানির মধ্যে ঝুলে থাকে। আর সাবমেরিনটিতে লাগানো ব্যাটারির সাহায্যে দ্রুতগতিতে আট ঘণ্টারও বেশি সমুদ্র নিচে ঘুরে বেড়ানো যায়। জানা গেছে, বিভিন্ন রিসোর্ট, বা ইয়টের মতোই মজা করে সমুদ্রে ঘোরার মজা নিতে ব্যবহার করা যাবে এই সেমি-সাবমেরিন।

লিবীয় সরকারের আচরণ নিষ্ঠুর ও অগ্রহণযোগ্য : ওবামা


এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লিবিয়ার দিকেই সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ। জনগণের বিক্ষোভ ক্রমেই হয়ে উঠছে দুর্বার। কোনো হুমকি-ধামকি কাজে আসছে না। গাদ্দাফি সমর্থকরা হামলা চালাচ্ছে। চলছে নিপীড়ন, নির্যাতন। নিরাপত্তা পরিষদ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সঙ্কট নিরসনে আহ্বান জানিয়ে আসছে। ওবামাকে হস্তক্ষেপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রেই চাপ বাড়ছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লিবিয়ায় আন্দোলনকারীদের ওপর ক্ষমতাসীনদের দমন-পীড়নকে 'নিষ্ঠুর ও অগ্রহণযোগ্য' আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সবকিছুর পরিণতি লিবীয় সরকারকে ভোগ করতে হবে। লিবিয়ার নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির সমর্থকরা রাজধানী ত্রিপলিসহ পশ্চিমাঞ্চল দখলে রাখার ঘোষণা দেয়ার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই মন্তব্য করেন বলে বৃহস্পতিবার বিবিসি অনলাইন জানায়। লিবিয়ার সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও সহিংসতার পর প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে মুখ খুললেন ওবামা। ওবামা কর্নেল গাদ্দাফির সরাসরি সমালোচনা না করলেও তার সমর্থকদের সহিংসতায় উস্কে দেয়ায় তীব্র নিন্দা জানান। হোয়াইট হাউস থেকে ওবামা বলেন, এই দুর্ভোগ ও রক্তপাত নিঃসন্দেহে নিষ্ঠুরতা, যা অগ্রহণযোগ্য। ওবামা বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থী এবং সাধারণ শিষ্টাচার বহির্ভূত। এই সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ওবামা আরও বলেন, তিনি তার প্রশাসনকে এ সমস্যা মোকাবিলায় যে কোনো ধরনের পদক্ষেপের ব্যাপারে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র একাই কিংবা তার মিত্রদের সঙ্গে নিয়েও গ্রহণ করতে পারে। অবশ্য কী সেই পদক্ষেপ সে ব্যাপারে কিছু বলেননি ওবামা। এদিকে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা জানিয়েছে, যদি প্রয়োজন হয় লিবিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে ইইউ প্রস্তুত রয়েছে। অন্যদিকে রাজধানী ত্রিপলি এখন ভীতির নগরী। অধিবাসীরা ঘরের বাইরে বেরুতে ভয় পাচ্ছে। কারণ সরকার সমর্থকরা তাদের ওপর গুলি চালাতে পারে। হাজার হাজার বিদেশি লিবিয়া ত্যাগ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। লিবিয়ায় ঠিক কত মানুষ নিহত হয়েছে তার প্রকৃত পরিসংখ্যান জানা এ মুহূর্তে অসম্ভব। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অন্ততপক্ষে ৩০০ লোকের মৃত্যু নিশ্চিত করলেও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস দাবি করছে অন্ততপক্ষে ৭০০ নিহত হয়েছে। এর আগে লিবিয়ায় আন্দোলনকারীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়নের তীব্র নিন্দা জানায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এক বিবৃতিতে নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে লিবীয় সরকারের প্রতি অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত জাতিসংঘের এই পরিষদ বিবৃতিতে বলে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যে দায়িত্ব্ তা পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি সহিষ্ণু আচরণ, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি সম্মান দেখানোরও আহ্বান জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে দ্বিতীয় দফা ভাষণ দেন গাদ্দাফি। ৭৫ মিনিটের ওই ভাষণে গাদ্দাফি বলেন, এখনও বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হয়নি, প্রয়োজন হলে তা করা হবে। এ সময় তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানোর জন্য তার সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান। গাদ্দাফি বলেন, তিনি দেশ ছাড়বেন না, প্রয়োজনে শহীদ হবেন। গত সপ্তাহে লিবিয়ায় রাজনৈতিক সংস্কার ও গাদ্দাফির ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।

অ্যাসাঞ্জকে সুইডেন পাঠাবে ব্রিটেন


উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে হস্তা-ন্তরের রায় দিয়েছেন ব্রিটিশ আদালত। গতকাল দক্ষিণ লন্ডনের বেলমার্শ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক হাওয়ার্ড রিডল এই রায় দেন। অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা অবশ্য বলেছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন। বিবিসি
যৌন অপরাধের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে সুইডেনে হস্তান্তর করা হবে। দুই নারীর সঙ্গে প্রতারণামূলক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ রয়েছে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে। অবশ্য এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন অ্যাসাঞ্জ।
আইনজীবীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, সুইডেনে অ্যাসাঞ্জ হয়তো সুবিচার পাবেন না। তাছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কয়েক হাজার গোপন বার্তা প্রকাশের জন্য অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করতে পারে সুইডেন। আর যুক্তরাষ্ট্রে গেলে অ্যাসাঞ্জের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
গত বছর ইরাক ও আফগান যুদ্ধ নিয়ে পেন্টাগনের কয়েক লাখ গোপন নথি এবং বিভিন্ন দেশে দূতাবাসের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিনিময় করা কয়েক হাজার গোপন বার্তা প্রকাশ করে বিশ্বব্যাপী ঝড় তোলে অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস। পররাষ্ট্র দফতরের মোট আড়াই লাখ গোপন বার্তা প্রকাশের ঘোষণা দেয় ওয়েবসাইটটি।
এতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নাজুক অবস্থায় পড়ে এবং উইকিলিকসের কার্যক্রম বন্ধের জন্যও নানাভাবে চেষ্টা চালানো হয়।
একপর্যায়ে সুইডিশ পুলিশ যৌন অপরাধের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
গত ৭ ডিসেম্বর লন্ডন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন অ্যাসাঞ্জ। নয় দিন কারাবাসের পর কঠিন কিছু শর্তে জামিনে মুক্তি পেয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন তিনি।

মাহমুদুর রহমানের বইয়ের জন্য ক্রেতার ভিড়


বিকাল তখন চারটা বাজে। অমর একুশে বইমেলায় হাসি প্রকাশনীর স্টলের সামনে প্রচণ্ড ভিড়। মিনিট দশেকের মধ্যে স্টলটির সামনে পড়ে ক্রেতার দীর্ঘ সারি। নানা বয়সের পাঠক, ক্রেতা এসে সারিতে দাঁড়ান। দুঃসাহসী সম্পাদক, প্রখ্যাত কলামিস্ট মাহমুদুর রহমানের লেখা সদ্য প্রকাশিত ‘১/১১ থেকে ডিজিটাল’ ও ‘নবরূপে বাকশাল’ বই দুটি কেনার জন্য তাদের এ সারি। এবারের মেলায় বই দুটি আসার পর থেকেই কেনার জন্য পাঠকের হিড়িক পড়ে। কপি ফুরিয়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে না পারায় গত বুধবার হাসি প্রকাশনীর প্রকাশক ও বিক্রেতারা যথারীতি বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। গতকালও বিকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। বই কিনে চুপচাপ চলে যান ক্রেতারা। তবু দীর্ঘতর সারি ছিল রাত নয়টা পর্যন্ত। হাসি প্রকাশনীর বিক্রেতাদেরও গতকাল অবসরের সুযোগ ছিল না। একের পর এক পাঠকের হাতে খাকি খামে মুড়িয়ে তুলে দিতে হয় বই দুটি। অধিকাংশ ক্রেতা একসঙ্গে দুটি বই-ই কেনেন। এতো ব্যস্ততার পরও আমিন, আবদুর রব, রুবেল—তিন বিক্রেতার কারও মুখে বিরক্তির ছাপ ছিল না। এ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত মাহমুদুর রহমানের বই দুটি মেলায় পাওয়া যাচ্ছে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে। হাসি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন জানান, বাইন্ডিংখানা থেকে বই এনে শেষ করতে পারছি না। বইটি আরও আগে ছাপতে পারলে ভালো হতো। এ স্টলে থাকা সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানের ‘অন্ধকার ও নিপীড়নের কারাজীবন’ বইটিও ভালো চলছে। বইটি প্রকাশিত হয় মাতৃভাষা প্রকাশনী থেকে। গতকাল পুরো বইমেলাই জমে ওঠে। নানা বিষয়ের মিলিয়ে বই আসে ৬৮টি। এর মধ্যে মোড়ক উন্মোচন হয় ৫৩টির।
‘১/১১ থেকে ডিজিটাল, নবরূপে বাকশাল’: ‘ফেলানী যুগে যখন একটি অসম চুক্তির আওতায় ট্রানজিটসহ ভারতের বিভিন্ন চুক্তি মেনে নিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে, তখন মাহমুদুর রহমানের লেখার অভাব দেশপ্রেমিক নাগরিকরা প্রচণ্ডভাবে অনুভব করছেন’ কথাগুলো বলেন ঢাকার ধানমন্ডির বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। গতকাল মেলায় এসে মাহমুদুর রহমানের বই কেনার পর তিনি একথা বলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বই দুটি কিনতে এসে বলেন, ‘কারাগারে থাকায় অনেকদিন দুঃসাহসী এ সম্পাদকের লেখা পড়তে পারছি না। তাঁর লেখায় রাজনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সাহসী বর্ণনা, এর থেকে উত্তরণের দিকনির্দেশনা থাকে। সেজন্য বইটি কিনতে এলাম।’ 
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বর্তমানের পর্যালোচনা করে যে ক’জন রাজনৈতিক ভাষ্যকার ভবিষ্যত্ বাতলে দিতে পারেন, মাহমুদুর রহমান নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে অন্যতম। তার অনেক লেখায় প্রকাশিত রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ ইঙ্গিত এখন অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। তার এরকম অনেক লেখা দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত হয় ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের ৩০ মে পর্যন্ত। এসব লেখা নিয়েই এ দুটি প্রবন্ধের বই। মানবাধিকার, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, আইনের শাসনের পক্ষে তাঁর দৃঢ়তম অবস্থানের বর্ণনা আছে বই দুটির প্রবন্ধে। ‘নবরূপে বাকশাল’ বইয়ের ‘স্বাধীনতা বেচে স্বাধীনতার ঋণ শোধ’, ‘আওয়ামী লীগের ঋণ বাংলাদেশ শোধ করবে কেন’ শিরোনামের দুটি লেখায় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।। 
শেষ সন্ধ্যায় টাস্কফোর্সের অভিযান : গতকাল শেষ সন্ধ্যায় মেলায় আবার অভিযান চালায় টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের সদস্যরা মেলার বাইরের প্রাঙ্গণ, ফুটপাতে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় লেখকদের পাইরেটেড বই উদ্ধার করেন। অভিযান শেষে মেলার তথ্য কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান টাস্কফোর্স কর্মকর্তা মনজুরুর রহমান। তিনি জানান, তারা ১৯ তারিখ ২৯টি স্টলকে সতর্ক করে দেন। এর মধ্যে ২০টি স্টল মালিক তাতে কর্ণপাত না করায় পরবর্তী মেলায় তাদের স্টল বরাদ্দ দেয়া হবে না। গত ২০ ফেব্রুয়ারি মেলায় চটি, নেট, নোটবই বিক্রির বিরুদ্ধে প্রথম অভিযান চালায় টাস্কফোর্স।
মোড়ক উন্মোচনের হাফসেঞ্চুরি : মেলার ২৪তম দিনে এসে মোড়ক উন্মোচনের ‘হাফসেঞ্চুরি’র রেকর্ড হলো। গতকাল নজরুল মঞ্চে ৫৩টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়। এর মধ্যে অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলামের সম্পাদনায় অন্য প্রকাশ থেকে গতকাল আসা রান্না বিষয়ক ‘ডানো ডেজার্ট ডিলাইট’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুন ও ডানোর কান্ট্রি ম্যানেজার আহমেদ কবীর। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রন্ধন শিল্পী কেকা ফেরদৌসী।
গতকালের বই : খ্যাতিমান সাংবাদিক, কলামিস্ট ড. রেজোয়ান সিদ্দিকীর প্রবন্ধের বই ‘দুঃশাসনের দুই বছর’ মেলায় এনেছে ইছামতি প্রকাশনী। এছাড়া উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে সাহিত্য প্রকাশ থেকে এসেছে ইমদাদুল হক মিলনের গল্প ‘কিশোর গল্প’, ইত্যাদি থেকে অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর চলচ্চিত্র বিষয়ক ‘ইউরোপের চলচ্চিত্র’, সময় থেকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জীবনীমূলক ‘বহে জলবতী ধারা- প্রথম খণ্ড’, ফরিদুর রেজা সাগরের সঙ্কলন ‘কিশোরসমগ্র ৭’, আবেদ খানের উপন্যাস ‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে’, অনিন্দ্য থেকে মাহবুব রেজার গল্প ‘আমার বঙ্গবন্ধুর গল্প’, বিভাষ থেকে আসাদ চৌধুরীর সঙ্কলন ‘নির্বাচিত ১০০ কবিতা’ ও অন্বেষা থেকে সৈয়দ শামসুল হকের অনুবাদ ‘শ্রাবণ রাজা’। অগ্রদূত মেলায় এনেছে সাংবাদিক কাফি কামালের দুটি বই ‘মেইট্টাল’ ও ‘ঋতুরঙ্গ’। 
মঞ্চের আয়োজন : বিকালে মেলামঞ্চে ‘রবীন্দ্রনাথ : না নিন্দা, না স্তু‘তি’ ও ‘রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণসাহিত্য’ শিরোনামে দুটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন শান্তনু কায়সার ও রোবায়েত ফেরদৌস। পবিত্র সরকারের সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, রফিক কায়সার, আমিনুর রহমান সুলতান, ফারজানা সিদ্দিকা। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় সাংস্কৃতিক সংগঠন শাপলা কলির আসর।