Friday, February 25, 2011

লিবীয় সরকারের আচরণ নিষ্ঠুর ও অগ্রহণযোগ্য : ওবামা


এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লিবিয়ার দিকেই সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ। জনগণের বিক্ষোভ ক্রমেই হয়ে উঠছে দুর্বার। কোনো হুমকি-ধামকি কাজে আসছে না। গাদ্দাফি সমর্থকরা হামলা চালাচ্ছে। চলছে নিপীড়ন, নির্যাতন। নিরাপত্তা পরিষদ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সঙ্কট নিরসনে আহ্বান জানিয়ে আসছে। ওবামাকে হস্তক্ষেপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রেই চাপ বাড়ছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লিবিয়ায় আন্দোলনকারীদের ওপর ক্ষমতাসীনদের দমন-পীড়নকে 'নিষ্ঠুর ও অগ্রহণযোগ্য' আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সবকিছুর পরিণতি লিবীয় সরকারকে ভোগ করতে হবে। লিবিয়ার নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির সমর্থকরা রাজধানী ত্রিপলিসহ পশ্চিমাঞ্চল দখলে রাখার ঘোষণা দেয়ার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই মন্তব্য করেন বলে বৃহস্পতিবার বিবিসি অনলাইন জানায়। লিবিয়ার সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও সহিংসতার পর প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে মুখ খুললেন ওবামা। ওবামা কর্নেল গাদ্দাফির সরাসরি সমালোচনা না করলেও তার সমর্থকদের সহিংসতায় উস্কে দেয়ায় তীব্র নিন্দা জানান। হোয়াইট হাউস থেকে ওবামা বলেন, এই দুর্ভোগ ও রক্তপাত নিঃসন্দেহে নিষ্ঠুরতা, যা অগ্রহণযোগ্য। ওবামা বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থী এবং সাধারণ শিষ্টাচার বহির্ভূত। এই সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ওবামা আরও বলেন, তিনি তার প্রশাসনকে এ সমস্যা মোকাবিলায় যে কোনো ধরনের পদক্ষেপের ব্যাপারে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র একাই কিংবা তার মিত্রদের সঙ্গে নিয়েও গ্রহণ করতে পারে। অবশ্য কী সেই পদক্ষেপ সে ব্যাপারে কিছু বলেননি ওবামা। এদিকে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা জানিয়েছে, যদি প্রয়োজন হয় লিবিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে ইইউ প্রস্তুত রয়েছে। অন্যদিকে রাজধানী ত্রিপলি এখন ভীতির নগরী। অধিবাসীরা ঘরের বাইরে বেরুতে ভয় পাচ্ছে। কারণ সরকার সমর্থকরা তাদের ওপর গুলি চালাতে পারে। হাজার হাজার বিদেশি লিবিয়া ত্যাগ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। লিবিয়ায় ঠিক কত মানুষ নিহত হয়েছে তার প্রকৃত পরিসংখ্যান জানা এ মুহূর্তে অসম্ভব। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অন্ততপক্ষে ৩০০ লোকের মৃত্যু নিশ্চিত করলেও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস দাবি করছে অন্ততপক্ষে ৭০০ নিহত হয়েছে। এর আগে লিবিয়ায় আন্দোলনকারীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়নের তীব্র নিন্দা জানায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এক বিবৃতিতে নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে লিবীয় সরকারের প্রতি অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত জাতিসংঘের এই পরিষদ বিবৃতিতে বলে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যে দায়িত্ব্ তা পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি সহিষ্ণু আচরণ, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি সম্মান দেখানোরও আহ্বান জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে দ্বিতীয় দফা ভাষণ দেন গাদ্দাফি। ৭৫ মিনিটের ওই ভাষণে গাদ্দাফি বলেন, এখনও বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হয়নি, প্রয়োজন হলে তা করা হবে। এ সময় তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানোর জন্য তার সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান। গাদ্দাফি বলেন, তিনি দেশ ছাড়বেন না, প্রয়োজনে শহীদ হবেন। গত সপ্তাহে লিবিয়ায় রাজনৈতিক সংস্কার ও গাদ্দাফির ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।