Friday, February 25, 2011

আত্মসম্মান বাঁচাতে ঘর থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসার আহবান খালেদার


 আত্মসম্মান বাঁচাতে ঘর থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আকাশে শকুনের আনাগোনা এবং নীচে নেকড়েদের ঘেউ ঘেউ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দেশে নিপীড়ত মানুষ জেগে উঠছে। দেশ আজ সংকটের পথে, ফলে আত্মসম্মান বাঁচাতে ঘর থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে দলের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান। পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত নৃশংস হত্যাকান্ডে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণ করতেই বিএনপি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বিপর্যয়ের আগেই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। চাপের মুখে অসম্মানজনকভাবে বিদায় নিতে না চাইলে অবিলম্বে পদত্যাগ করুণ। মধ্যবর্তী নির্বাচন দিন। অন্যথায় আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ ক্ষমতা ছাড়া করবে।
পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনা থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য বৃহস্পতিবার বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে গানের আয়োজন করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও তিনি সতর্ক করেন।
ভাষা শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পিলখানার মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞে সেনাবাহিনীর যেসব মেধাবী চৌকষ অফিসার সেদিন জীবন দিয়েছিলেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে একের পর এক কলঙ্কের অধ্যায় রচনা করে চলেছে। তারা সরকার গঠনের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ঘটে যায় পিলখানা হত্যাকান্ডের মতো ভয়ঙ্কর বিপর্যয়। এটি এ সরকারের প্রথম এবং আমার বিবেচনায় সবচেয়ে শোচনীয় কলংকজনক ঘটনা। দেশদ্রোহী চক্রের ক্রিড়নক হয়ে মুষ্টিমেয় কিছু বিপথগামী লোক ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের জননন্দিত নির্বাচিত রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছিলো।
তিনি বলেন, দীর্ঘ দিনের রাজপথের অভিজ্ঞতা আমাকে বলে দিচ্ছে উত্তাল আরেকটি দুর্বার আন্দোলনের জন্য সারাদেশেই আজ টান টান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ তৈরি আছে। বাংলাদেশে অনতিবিলম্বে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের মাধ্যমেই কেবল অনিবার্য উত্তাল গণঅভূত্থান পাশ কাটানো সম্ভব।
বেগম জিয়া বলেন, কোনো যুদ্ধের সময় ভিনদেশী আক্রমনকারীরা চরম অপমানের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যে-সব বর্বর পন্থা অবলম্বন করে থাকে, পিলখানায় সে সবই প্রত্যক্ষ করার দুর্ভাগ্য আমাদের হয়েছে। বেগম জিয়া বলেন, দুই বছর পেরিয়ে গেলেও পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায্য বিচার আজো হয়নি। নিশ্চিত এ সরকারের আমলে এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের সুবিচার হবে না। বিচারের নামে হবে প্রহসন। এখন বাংলাদেশে দেশপ্রেমিক সরকারের বিকল্প নেই বলে দাবি করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সীমান্তে প্রতিনিয়ত নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে। ফেলানীর মতো নিস্পাপ কিশোরীদের মৃতদেহ কাঁটাতারে ঝুলছে।
সরকার কেবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দীদের নয়, দেশের সম্মানিত বরেণ্য নাগরিকদেরও অপমান হেনস্থা করছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শাসক পরিবারের এক বরপুত্র হাজার কোটি ডলার লুট করে বিদেশি ব্যাংকে অর্থ জমিয়েছে।
তিউনিশিয়া, মিসর, লিবিয়ায় বিক্ষোভ চলছে বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বেগম জিয়া আরো বলেন, জনগণ রাজপথে নেমে আসলে ঠেকাতে পারবেন না। তাই এখনোও যদি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় না হয় তবে এ সরকারের পরিণতিও ভয়াবহ হবে। খালেদা জিয়া বলেন, আ'লীগ হরতাল ডেকে এদেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা আ'লীগের অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। বিশ্বকাপের জন্য আন্দোলন স্থগিত রেখেছি। তিনি বলেন, মইন উ ফখরুদ্দীন পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন জনগণের সম্মুখে তাদের বিচার হবে। রিমান্ড বন্ধ করে তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, অধ্যাপক মাহাবুব উল্লাহ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ।
(শীর্ষ নিউজ ডটকম/