Friday, February 25, 2011

মাহমুদুর রহমানের বইয়ের জন্য ক্রেতার ভিড়


বিকাল তখন চারটা বাজে। অমর একুশে বইমেলায় হাসি প্রকাশনীর স্টলের সামনে প্রচণ্ড ভিড়। মিনিট দশেকের মধ্যে স্টলটির সামনে পড়ে ক্রেতার দীর্ঘ সারি। নানা বয়সের পাঠক, ক্রেতা এসে সারিতে দাঁড়ান। দুঃসাহসী সম্পাদক, প্রখ্যাত কলামিস্ট মাহমুদুর রহমানের লেখা সদ্য প্রকাশিত ‘১/১১ থেকে ডিজিটাল’ ও ‘নবরূপে বাকশাল’ বই দুটি কেনার জন্য তাদের এ সারি। এবারের মেলায় বই দুটি আসার পর থেকেই কেনার জন্য পাঠকের হিড়িক পড়ে। কপি ফুরিয়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে না পারায় গত বুধবার হাসি প্রকাশনীর প্রকাশক ও বিক্রেতারা যথারীতি বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। গতকালও বিকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। বই কিনে চুপচাপ চলে যান ক্রেতারা। তবু দীর্ঘতর সারি ছিল রাত নয়টা পর্যন্ত। হাসি প্রকাশনীর বিক্রেতাদেরও গতকাল অবসরের সুযোগ ছিল না। একের পর এক পাঠকের হাতে খাকি খামে মুড়িয়ে তুলে দিতে হয় বই দুটি। অধিকাংশ ক্রেতা একসঙ্গে দুটি বই-ই কেনেন। এতো ব্যস্ততার পরও আমিন, আবদুর রব, রুবেল—তিন বিক্রেতার কারও মুখে বিরক্তির ছাপ ছিল না। এ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত মাহমুদুর রহমানের বই দুটি মেলায় পাওয়া যাচ্ছে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে। হাসি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন জানান, বাইন্ডিংখানা থেকে বই এনে শেষ করতে পারছি না। বইটি আরও আগে ছাপতে পারলে ভালো হতো। এ স্টলে থাকা সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানের ‘অন্ধকার ও নিপীড়নের কারাজীবন’ বইটিও ভালো চলছে। বইটি প্রকাশিত হয় মাতৃভাষা প্রকাশনী থেকে। গতকাল পুরো বইমেলাই জমে ওঠে। নানা বিষয়ের মিলিয়ে বই আসে ৬৮টি। এর মধ্যে মোড়ক উন্মোচন হয় ৫৩টির।
‘১/১১ থেকে ডিজিটাল, নবরূপে বাকশাল’: ‘ফেলানী যুগে যখন একটি অসম চুক্তির আওতায় ট্রানজিটসহ ভারতের বিভিন্ন চুক্তি মেনে নিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে, তখন মাহমুদুর রহমানের লেখার অভাব দেশপ্রেমিক নাগরিকরা প্রচণ্ডভাবে অনুভব করছেন’ কথাগুলো বলেন ঢাকার ধানমন্ডির বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। গতকাল মেলায় এসে মাহমুদুর রহমানের বই কেনার পর তিনি একথা বলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বই দুটি কিনতে এসে বলেন, ‘কারাগারে থাকায় অনেকদিন দুঃসাহসী এ সম্পাদকের লেখা পড়তে পারছি না। তাঁর লেখায় রাজনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সাহসী বর্ণনা, এর থেকে উত্তরণের দিকনির্দেশনা থাকে। সেজন্য বইটি কিনতে এলাম।’ 
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বর্তমানের পর্যালোচনা করে যে ক’জন রাজনৈতিক ভাষ্যকার ভবিষ্যত্ বাতলে দিতে পারেন, মাহমুদুর রহমান নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে অন্যতম। তার অনেক লেখায় প্রকাশিত রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ ইঙ্গিত এখন অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। তার এরকম অনেক লেখা দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত হয় ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের ৩০ মে পর্যন্ত। এসব লেখা নিয়েই এ দুটি প্রবন্ধের বই। মানবাধিকার, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, আইনের শাসনের পক্ষে তাঁর দৃঢ়তম অবস্থানের বর্ণনা আছে বই দুটির প্রবন্ধে। ‘নবরূপে বাকশাল’ বইয়ের ‘স্বাধীনতা বেচে স্বাধীনতার ঋণ শোধ’, ‘আওয়ামী লীগের ঋণ বাংলাদেশ শোধ করবে কেন’ শিরোনামের দুটি লেখায় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।। 
শেষ সন্ধ্যায় টাস্কফোর্সের অভিযান : গতকাল শেষ সন্ধ্যায় মেলায় আবার অভিযান চালায় টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের সদস্যরা মেলার বাইরের প্রাঙ্গণ, ফুটপাতে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় লেখকদের পাইরেটেড বই উদ্ধার করেন। অভিযান শেষে মেলার তথ্য কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান টাস্কফোর্স কর্মকর্তা মনজুরুর রহমান। তিনি জানান, তারা ১৯ তারিখ ২৯টি স্টলকে সতর্ক করে দেন। এর মধ্যে ২০টি স্টল মালিক তাতে কর্ণপাত না করায় পরবর্তী মেলায় তাদের স্টল বরাদ্দ দেয়া হবে না। গত ২০ ফেব্রুয়ারি মেলায় চটি, নেট, নোটবই বিক্রির বিরুদ্ধে প্রথম অভিযান চালায় টাস্কফোর্স।
মোড়ক উন্মোচনের হাফসেঞ্চুরি : মেলার ২৪তম দিনে এসে মোড়ক উন্মোচনের ‘হাফসেঞ্চুরি’র রেকর্ড হলো। গতকাল নজরুল মঞ্চে ৫৩টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়। এর মধ্যে অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলামের সম্পাদনায় অন্য প্রকাশ থেকে গতকাল আসা রান্না বিষয়ক ‘ডানো ডেজার্ট ডিলাইট’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুন ও ডানোর কান্ট্রি ম্যানেজার আহমেদ কবীর। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রন্ধন শিল্পী কেকা ফেরদৌসী।
গতকালের বই : খ্যাতিমান সাংবাদিক, কলামিস্ট ড. রেজোয়ান সিদ্দিকীর প্রবন্ধের বই ‘দুঃশাসনের দুই বছর’ মেলায় এনেছে ইছামতি প্রকাশনী। এছাড়া উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে সাহিত্য প্রকাশ থেকে এসেছে ইমদাদুল হক মিলনের গল্প ‘কিশোর গল্প’, ইত্যাদি থেকে অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর চলচ্চিত্র বিষয়ক ‘ইউরোপের চলচ্চিত্র’, সময় থেকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জীবনীমূলক ‘বহে জলবতী ধারা- প্রথম খণ্ড’, ফরিদুর রেজা সাগরের সঙ্কলন ‘কিশোরসমগ্র ৭’, আবেদ খানের উপন্যাস ‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে’, অনিন্দ্য থেকে মাহবুব রেজার গল্প ‘আমার বঙ্গবন্ধুর গল্প’, বিভাষ থেকে আসাদ চৌধুরীর সঙ্কলন ‘নির্বাচিত ১০০ কবিতা’ ও অন্বেষা থেকে সৈয়দ শামসুল হকের অনুবাদ ‘শ্রাবণ রাজা’। অগ্রদূত মেলায় এনেছে সাংবাদিক কাফি কামালের দুটি বই ‘মেইট্টাল’ ও ‘ঋতুরঙ্গ’। 
মঞ্চের আয়োজন : বিকালে মেলামঞ্চে ‘রবীন্দ্রনাথ : না নিন্দা, না স্তু‘তি’ ও ‘রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণসাহিত্য’ শিরোনামে দুটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন শান্তনু কায়সার ও রোবায়েত ফেরদৌস। পবিত্র সরকারের সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, রফিক কায়সার, আমিনুর রহমান সুলতান, ফারজানা সিদ্দিকা। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় সাংস্কৃতিক সংগঠন শাপলা কলির আসর।