Monday, February 21, 2011

লিবিয়ায় বাংলাদেশিসহ তিনশতাধিক বিদেশি নাগরিক জিম্মি



ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি (শীর্ষ নিউজ ডটকম): লিবিয়ায় চলমান সরকার বিরোধী গণ আন্দোলনে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশিরা। বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশিসহ সেখানে কর্মরত তিনশতাধিক বিদেশি নাগরিককে ৩ দিন ধরে জিম্মি করে রেখেছে। এদের মধ্যে ৯০-১০০ জনের মতো বাংলাদেশি। বাকীরা শ্রীলংকা ও নেপালের নাগরিক বলে জানা গেছে। শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশি ও তাদের স্বজনরা।
গত কয়েকদিন ধরে লিবিয়ায় ব্যপক বিক্ষোভ চলছে। বন্দর নগরী বেনগাজি, আল-বাইদা ও আজদাবিয়ায়সহ বিভিন্ন শহরের পর চলমান এ বিক্ষোভের ঢেউ এসে লাগে রাজধানী ত্রিপলীতেও। বিক্ষোভের মুখে দেশটিতে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকরা পড়েন চরম দুর্ভোগে। দেশটির রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন নিজেদের ঘরের মধ্যে। দেশটিতে কর্মরত ক'জনের পরিবারের সদস্যরা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন শীর্ষ নিউজ ডটকমকে। 
বেনগাজি থেকে সাড়ে তিন'শ কিলোমিটার পূর্বে সীমান্ত শহর দ্বারনা সিটিতে কর্মরত মানিকগঞ্জের বাসিন্দা শফিউদ্দিন বিশ্বাস টেলিফোনে তার স্বজনদের জানিয়েছেন, তিন দিন ধরে তারা প্রায় তিনশ কর্মরত বিদেশি নাগরিক জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন। এদের মধ্যে ৯০-১০০ জনের মতো বাংলাদেশি। বাকীরা শ্রীলংকা ও নেপালের নাগরিক। প্রথমদিকে তাদের খাবার সরবরাহ করা হলেও গত দুইদিন ধরে তাদের কোনো প্রকার খাবার দেয়া হচ্ছে না। লিবিয়ায় জিম্মি শফিউদ্দিনের ভাই সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মচারী জিন্নাত আলী বিশ্বাস শীর্ষ নিউজ ডটকমকে এসব কথা জানান।
রংপুরের বাসিন্দা রকিবুল হাসান দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ায় কর্মরত আছেন। লিবিয়ার চলমান বিক্ষোভের পর থেকে তার পরিবারের সদস্যরা টেলিফোনে যোগগোগ স্থাপনের চেষ্টা করেও তা পারেননি। 
আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, সোমবার দুপুরে লিবিয়ার বন্দর নগরী বেনগাজিতে একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মীরওয়ারিশপুর গ্রামের আমিন উল্যাহর পুত্র শিপন মোবাইলে শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বলেন, পুরো লিবিয়া জুড়েই সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে তিনি বাসা থেকে বের হতে না পারায় বিস্তারিত বলতে পারছেন না। তিনি বলেন, সরকার বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে তাদের আরো দুভর্োগ বাড়বে। বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথেও তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না বলেও তিনি জানান।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার উইংয়ের মহাপরিচালক লায়লা বেগম শীর্ষ নিউজ ডটকমকে জানান, লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবিএম নুরুজ্জামানের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, সেখানে বসবাসরত কোন বাংলাদেশি জিম্মি করা হয়নি। লিবিয়ার সংহিস ঘটনায় এ পর্যন্ত কোন বাংলাদেশি নাগরিক হতাহত হননি। বাংলাদেশি নাগরিকদের স্বজনদের আতংকিত না হওয়ার পরার্মশ দেন তিনি।

সেগুনবাগিচা থেকে আ’লীগ এমপির মেয়ে অপহরণ


কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি আফজাল হোসেনের মেয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে অপহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অপহৃত জোবাইদা আক্তার তুষা (১৬) খিলগাঁও হাইস্কুল থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এ ঘটনায় এমপি নিজে বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছেন। মামলায় বলা হয়, শনিবার রাতে সেগুনবাগিচার বাসার সামনে থেকে তার কিশোরী মেয়েকে দুষ্কৃতকারীরা অপহরণ করে নিয়ে গেছে। পুলিশ গতকাল পর্যন্ত তুষাকে উদ্ধার বা কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে পুলিশ বলেছে, এটি অপহরণ নাকি প্রেমঘটিত ঘটনা তা তদন্তের পর জানা যাবে। 
শাহবাগ থানায় করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাত ৯টার দিকে ৬/৪, সেগুনবাগিচার হাসিনূর কটেজের সামনে থেকে হৃদয় (২৪) নামে এক যুবক সহযোগীদের নিয়ে তুষাকে অপহরণ করে। অপহরণকারীরা একটি প্রাইভেটকারে তুলে তাকে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিম জানান, একজন এমপির মেয়ে অপহরণ হয়েছে। তাকে উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। শনিবার রাতেই এমপি বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় হৃদয়, জাকির (৫৫), তার গাড়িচালক মনির (৩০) এবং হৃদয়ের মাকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। পুলিশ তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছে। 
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর মোক্তার হোসেন জানান, ওই ঘটনায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাচ্ছি। ভবনের নিরাপত্তাকর্মী পুলিশকে জানিয়েছে, তুষা ফোনে কথা বলতে বলতে মূল ফটক দিয়ে বের হয়ে যায়। অন্যদিকে তুষার মা-বাবা পুলিশকে জানায়, তার কাছে কোনো মোবাইল ফোন ছিল না। তিনি বলেন, ঘটনাটি রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। আসামিদের গ্রেফতার ও মেয়েটিকে উদ্ধারের পর প্রকৃত ঘটনা নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি। 
প্রসঙ্গত, এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে একই কটেজ থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফিরে আসেনি কিশোরী আয়েশা চৌধুরী টুম্পা। টুম্পা সেগুনবাগিচা বেগম রহিমা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। পরে ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় রসুলবাগ বটতলা লোহার ব্রিজের নিচ থেকে টুম্পার লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ অমর একুশে : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস



আবার এসেছে ফিরে একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশ মানে মাথানত না করা। অধিকার আদায়ে আপসহীনভাবে এগিয়ে যাওয়া। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...।’ হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এ গানের করুণ সুরে আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে যাবে লাখো মানুষের প্রভাতফেরির মিছিল। অমর একুশের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দিনের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ফুল নিয়ে অগণিত মিছিল যাওয়া শুরু হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। 
আজ অমর একুশে। মহান শহীদ দিবস। শুধু বাংলাদেশে শহীদ দিবস নয়, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে। আজ থেকে ৫৯ বছর আগে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। বরকত, রফিক, সালাম, জব্বারসহ নাম না জানা বেশ ক’জন শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল; যার চূড়ান্ত রূপ হিসেবে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন তাই এদেশের রক্তঝরা প্রথম গণতান্ত্রিক আন্দোলন। এজন্য প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। 
একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এ দিনটি একদিকে শোকাবহ, অন্যদিকে গৌরবোজ্জ্বল। বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলন শুধু এদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও নতুন চেতনা-প্রবাহ সৃষ্টি করেছিল। এই চেতনা ছিল অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং ন্যায়বিচারের মূল্যবোধসঞ্জাত। এজন্যই ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম একুশে পদক প্রবর্তন করেন। চার ক্যাটাগরিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ড. কুদরাত-এ-খুদা, কবি জসীমউদ্দীন, কবি সুফিয়া কামাল, কবি আবদুল কাদির, অধ্যাপক মো. মনসুর উদ্দিন, সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আবুল কালাম শামসুদ্দীন ও আবদুস সালাম প্রথম এ সম্মাননা পান। 
আজ অমর একুশে উপলক্ষে দেশের সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, পুষ্পস্তবক অর্পণ, আজিমপুরে ভাষা শহীদদের কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা, একুশের কবিতা পাঠের আসর এবং ভাষাসৈনিকদের অংশগ্রহণে একুশের স্মৃতিচারণ। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় শহীদ মিনার ঘিরে একই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কারণ, শহীদ মিনার মা ও সন্তানের প্রতীকস্তম্ভ।
মহান একুশে উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বাণী দিয়েছেন। সংবাদপত্রগুলো আজ এ উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। এসব ক্রোড়পত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও কবিতায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে নতুন প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন করা হয়। রেডিও-টেলিভিশন ও বেসরকারি চ্যানেলগুলো শহীদ দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। অমর একুশে উপলক্ষে বাংলা একাডেমীর বইমেলা চলছে। একুশের সংকলন প্রকাশ এ দিবসটির একটি উল্লেখযোগ্য দিক। সারাদেশেই সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এ সংকলন প্রকাশ করা হয়ে থাকে। 
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী : মহান ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহীদদের অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। 
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, অমর একুশে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক। 
বিরোধীদলীয় নেত্রীর বাণী : বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এক বাণীতে ভাষা শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে এক তাত্পর্যময় দিন। দেশ স্বাধীন হলেও নতুন করে ভিন্নমাত্রায় আধিপত্যবাদী শক্তি এদেশের ওপর সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য কায়েম করতে চাচ্ছে। একুশের অম্লান চেতনায় সব ষড়যন্ত্রকারী, আন্তর্জাতিক আধিপত্য শক্তিকে রুখতে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ : সকাল সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সংগঠনের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং সকাল সাড়ে ৭টায় নিউমার্কেটের দক্ষিণ গেট থেকে নগ্নপায়ে কালোব্যাজ ধারণ করে প্রভাতফেরিসহ আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবর জিয়ারত, পুষ্পমাল্য অর্পণ ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোও একই ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
বিএনপি : ভোরে দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং দলীয় ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। ভোর ৬টায় বলাকা সিনেমা হলের সামনে থেকে কালোব্যাজ ধারণ ও প্রভাতফেরিসহ আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবর জিয়ারত, পুষ্পমাল্য অর্পণ ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। এছাড়া বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে দেশব্যাপী জেলা ও থানা পর্যায়ে এ উপলক্ষে প্রভাতফেরি, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ মেলেনি : ১৫ মার্চ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি



জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আটকের ৮ মাস পরও তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি সরকার। চূড়ান্তভাবে আদালতের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেও তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়ে সরকার আবারও সময়ের আবেদন করেছে। একই আবেদনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করা পর্যন্ত মাওলানা সাঈদীকে আটক রাখার জন্য প্রার্থনা জানানো হয়েছে। এ আবেদনে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আদালত সরকারপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, শুরু থেকেই আপনাদের মুখে একই কথা শুনছি। আগের আবেদনে বলেছেন ‘সাঈদীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে’। আজকের আবেদনেও একই বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যে আবেদন করবেন হয়তো সেখানেও একই বক্তব্যই উল্লেখ করা হবে। আদালত সরকারপক্ষের আইনজীবীদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, কোনো অভিযোগ ছাড়াই বিনা কারণে একটি লোককে কতদিন আটক রাখা যায়? আদালতেরও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। এ মন্তব্য করে আদালত ১৫ মার্চ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। ওইদিন মাওলানা সাঈদীকে আদালতে হাজির করার জন্য নির্দেশ দেন আদালত। এই সঙ্গে আদালত ওই সময়ের মধ্যে মামলার সব নথিপত্র আদালতে দাখিল করার জন্য সরকারপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দেন। 
এদিকে তদন্ত কাজে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনে পিরোজপুরের জিয়ানগর থানায় মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা ৬টি সাধারণ ডায়েরি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলে আদালতে তথ্য উপস্থাপন করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি বলেন, গত বছর জুন মাসে মাওলানা সাঈদীকে কোনো কারণ ছাড়াই আটক করে কারাগারে অন্তরীণ করে রাখা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে সরকার তাকে আটক রাখার জন্য এই ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে। বহু তদন্ত ও অনুসন্ধান করেও তার বিরুদ্ধে মানবতা কিংবা যুদ্ধাপরাধ তো দূরের কথা, কোনো ধরনের অপরাধেরই বিন্দুমাত্র উপাদান খুঁজে পায়নি সরকার। ফলে সরকার এখন সময় নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণ দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে। সরকারপক্ষের এ আবেদনের ওপর আদালত মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে ২০ ফেব্রুয়ারি শুনানির তারিখ ধার্য করেন। আদালতের পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কড়া পুলিশি পাহারায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। বেলা ১১টার দিকে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। 
চিকিত্সা ও জামিনের আবেদন : অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বিভিন্ন দেশের ট্রাইব্যুনালের রেফারেন্স উল্লেখ করে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি অনুযায়ী বিচার শুরুর আগে আসামিকে জামিন দেয়ার বিধান রয়েছে। যেহেতু সরকার কয়েক দফায় সময় নিয়েও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উপস্থাপন করতে পারেনি, কাজেই সঙ্গত কারণেই আদালত তার জামিন মঞ্জুর করবেন। আমরা যে কোনো শর্তে জামিনের প্রার্থনা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, মাওলানা সাঈদী একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। সারা দেশে তার লাখ লাখ ভক্ত ও অনুরাগী রয়েছেন। তাকে জামিনে মুক্তি দিলে তিনি পালিয়ে যাবেন না। চিকিত্সার আবেদন করে তিনি বলেন, সাঈদী সাহেব হার্টের রোগী। তার বুকে দুটি রিং বসানো হয়েছে। এছাড়াও তার শরীরে বিভিন্ন জটিল রোগ রয়েছে। যে কোনো একটি কার্ডিয়াক হাসপাতালে তাকে উন্নত চিকিত্সা দেয়া প্রয়োজন। চিকিত্সার জন্য একটি লিখিত আবেদন পেশ করার পরামর্শ দিয়ে আদালত বলেন, আপনি একটি আবেদন করেন। আদালত এটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন। আদালতে শুনানিকালে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ছাড়াও অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, ফরিদউদ্দিন খান, কামালউদ্দিন আহমেদসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মাওলানা সাঈদীর আত্মীয়-স্বজন ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান চৌধুরী, জসিমউদ্দিন সরকার উপস্থিত ছিলেন।

ভেটো ক্ষমতা অন্য দেশগুলোর জন্য অবমাননাকর : আহমাদিনেজাদ



ইরানের প্রেসিডেন্ট ডক্টর মাহমুদ আহমাদিনেজাদ বলেছেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কোনো কোনো দেশের ভেটো ক্ষমতা অন্য দেশগুলোর জন্য অবমাননাকর। ফলে বিশ্ব পরিচালনা ব্যবস্থায় অবশ্যই সংস্কার আনতে হবে। 
তিনি রোববার জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভ্যালেকে দেয়া সাক্ষাতের সময় এই বক্তব্য রাখেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, বর্তমান ‘বিশ্ব পরিচালনা ব্যবস্থা’ এভাবে চলতে পারে না। জার্মানি ও ইরান আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো পরিচালনার নতুন পন্থা নির্ধারণের প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে সক্ষম বলে আহমাদিনেজাদ মন্তব্য করেন। জার্মানি আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোয় ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চায় বলে ভেস্টারভ্যালে দাবি করেন। 
এর আগে শনিবার অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অবৈধ বসতি নির্মাণ বন্ধ করা ও বসতি নির্মাণ তত্পরতার বিরুদ্ধে নিন্দাসূচক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত। শুক্রবার ভোটাভুটির সময় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ভেটো ক্ষমতাধারী অন্য চারটি দেশ এবং এ পরিষদের ১০ নির্বাচিত সদস্য দেশ ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। এদিকে ইরানের স্পিকার ড. আলী লারিজানি বলেছেন, মুসলমানদের ওপর কর্তৃত্ব করার অধিকার যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের নেই। তেহরানে ২৪তম আন্তর্জাতিক ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় ড. আলী লারিজানি এসব কথা বলেছেন। তিনি উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের গণজাগরণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ অঞ্চলে যে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে তার জন্য মূলত যুক্তরাষ্ট্র দায়ী। তবে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে এ গণজাগরণ দমন করা যাবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ইরানের স্পিকার বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আজ যে জাগরণ দেখা দিয়েছে তা অবশ্যই মুসলমানদের ইসলামী চেতনার ফসল। এ কারণে মার্কিন সরকার ও তার ইহুদিবাদী দোসর এবং সহযোগী একনায়করা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি এ অঞ্চলের স্বৈরশাসকদের উদ্দেশে বলেন, মার্কিন স্বার্থরক্ষার জন্য নিজ দেশের জনগণ হত্যা করলে তাতে শুধু নিজেদেরই বোঝা বাড়বে।
এসব শাসকের নিজ দেশের জনগণকে সম্মান দেখানো ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই বলেও মন্তব্য করেন ইরানের স্পিকার। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে জনগণ যে জেগে উঠেছে এটাই বাস্তব। পশ্চিমা বলদর্পী শক্তিগুলোর অব্যাহত শোষণ-নিপীড়ন ও কর্তৃত্বকামী মনোভাবের কারণে এ ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্পের’ সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ড. লারিজানি বলেন, মুসলিম বিশ্বের চলমান পরিস্থিতিতে শত্রুরা মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্যের বীজ বোনার চেষ্টা করতে পারে। এ অবস্থায় মুসলমানদের মধ্যে যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্য দরকার এবং সে ঐক্যের ভিত্তি হতে হবে ইসলাম। তিনি বলেন, শত্রুরা সব সময় ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করতে চায় তা নয়, কখনও কখনও আঞ্চলিক বিভাজনেরও চেষ্টা চালায়। এ জন্য সব বিষয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে।

বাহরাইনের পার্ল চত্বরের দখল নিল ফের বিক্ষোভকারীরা : অনির্দিষ্টকালের শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক : আন্দোলনে নতুন মোড়



আবারও বাহরাইনের রাজধানী মানামার পার্ল চত্বরের দখল নিয়েছে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জনতা। এ সময় গণতন্ত্রকামী জনগণ ‘বিজয় বিজয়’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। সেখান থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ফিরে যাওয়ার পর হাজার হাজার লোক এসে সমবেত হয় পার্ল চত্বরে। মিসরের তাহরির চত্বরের মতো বাহরাইনের পার্ল চত্বর সরকারবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। 
এর আগে সেখান থেকে সেনাবাহিনী চলে গেলেও পুলিশ পার্ল চত্বরে আসা জনগণের ওপর টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। তবে তারা টিয়ারগ্যাস ও পুলিশের সব বাধা উপেক্ষা করে চত্বরে তাদের অবস্থান ধরে রাখে। এরপর সেখানে শুরু হয় মানুষের স্রোত। এ সময় উপায়ান্তর না দেখে পুলিশও কিছুক্ষণ পর সরে পড়ে। গা-ঢাকা দিয়েছে সরকার সমর্থক গুপ্ত ঘাতকরাও। পুলিশ-নিরাপত্তা বাহিনীমুক্ত চত্বরে মানুষ সিজদায় পড়ে যায় এবং খুশিতে তারা মাটিতে চুমু খেতে থাকে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী চলে যাওয়াকে জনগণ তাদের বিজয় বলে মনে করছে। আজ দিনের প্রথম ভাগে বাহরাইনের যুবরাজ শেখ সালমান বিন হামাদ আল-খলিফা সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশ দেন। তবে পুলিশের হামলায় আজ অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনে ৭ জন নিহত ও কয়েকশ’ আহত হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছে ৬৫ জন।
বিক্ষোভকারীরা বলছে, তারা স্কয়ার ছাড়বে না। উল্লাসমুখর বিক্ষোভকারীরা পতাকা ওড়াচ্ছে। সঙ্গে বহন করছে স্লোগান সংবলিত ব্যানার। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ তারা পরোয়া করছে না। তত্পরতার মধ্য দিয়ে তারই প্রতিফলন ঘটছে। তারা প্রয়োজনে অস্থায়ী তাঁবু খাটাচ্ছে। গড়ে তুলছে অস্থায়ী হাসপাতাল। বিক্ষোভরত এক মহিলা দ্বীর্থহীন ভাষায় বলেন, আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই না। সেনারা আসুক, আমাদের হত্যা করুক—আমরা পরোয়া করি না। তারা (সেনা) যে কত নিষ্ঠুর, বিশ্ববাসী তা-ই দেখতে পাবে।
এদিকে বাহরাইনে অনির্দিষ্টকালের জন্য শ্রমিক ধর্মঘট ডেকেছে দেশটির সাধারণ শ্রমিকরা। এর আওতায় বাহরাইন এয়ারলাইন্সও ধর্মঘটে যোগ দিচ্ছে। দেশটিতে চলমান আন্দোলনে সেনাবাহিনী যে দমন অভিযান চালিয়েছে, তার প্রতিবাদে এ ধর্মঘট ডাকা হলো। শ্রমিকদের এ কর্মসূচির ফলে সরকারবিরোধী আন্দোলন নতুন মোড় নিল বলে মনে করা হচ্ছে। 
এদিকে বাহরাইনের রাজধানী মানামার পার্ল চত্বরে আবার বিক্ষোভকারীরা ফিরে এসেছেন। সেখান থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার পর হাজার হাজার লোক গতকাল ফিরে আসে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পার্ল চত্বরে সমবেত কয়েক হাজার লোকের ওপর পুলিশ ও সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছিল। পার্ল চত্বর মিসরের তাহরির চত্বরের মতো আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। 
এর আগে বাহরাইন সরকারের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির বিরোধী জোট। আল-ওয়েফাক জোটের সংসদ সদস্য ইব্রাহিম মাত্তার বলেছেন, আমরা মনে করি সরকার আলোচনার বিষয়ে খুব আন্তরিক নয়। কারণ বিরোধী জোটের আন্দোলন দমনের জন্য এখনও সেনাবাহিনী রাস্তায় রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা না ছাড়া পর্যন্ত আল-ওয়েফাক জোট কোনো আলোচনায় বসবে না। এছাড়া সেনাবাহিনী প্রত্যাহার ও সরকারকে অবশ্যই সাংবিধানিক শাসন চালুর বিষয়টি মেনে নিতে হবে। ইব্রাহিম মাত্তার আরও বলেছেন, এসব শর্ত পূরণ হলে ওয়েফাক জোট আলোচনায় যাবে এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। তবে তাতে বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকতে পারবে না। 
বাদশাহ হামাদ বিন ঈসা আল-খলিফা সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এর জবাবে বিরোধী জোট এসব কথা বলল। অন্যদিকে বাহরাইনে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রমিন মেহমানপারাস্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাহরাইনের সেনাবাহিনীর সহিংস আচরণের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাহরাইনের চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ বাহরাইন হচ্ছে, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সরকারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও কৌশলগত মিত্র। সেখানে মার্কিন পঞ্চম নৌবহর মোতায়েন রয়েছে। এ সম্পর্কে ওয়াশিংটনে বিবিসির সাংবাদিক কিম গিতাস বলেছেন, মার্কিন সরকার মিসরের চেয়ে বাহরাইন পরিস্থিতির জন্য বেশি উদ্বিগ্ন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্র আতঙ্ক বোধ করছে।
এদিকে বাহরাইনের পার্ল স্কয়ারে গণতন্ত্রপন্থী প্রতিবাদীদের ওপর হত্যা ও রক্তাক্ত দমন অভিযানের জন্য দেশটির বাদশাহর ব্রিটিশ উপদেষ্টা ইয়ান হ্যান্ডারসন দায়ী বলে অনেক বাহরাইনি দাবি করছেন। হ্যান্ডারসন ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বাহরাইনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং ৩০ বছর এ পদে বহাল থাকার পর এখন বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ঈসা আল-খলিফার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।
সম্প্রতি বাহরাইনে গণতন্ত্রপন্থী হাজার হাজার প্রতিবাদীর ওপর হত্যা ও রক্তাক্ত দমন অভিযান চালানো হলে ৬ জন নিহত এবং কয়েকশ’ আহত হন। 
বাহরাইনের প্রতিবাদী জনতা রাজতন্ত্রের অবসান দাবি করছেন। বাহরাইনের রাজধানী মানামার প্রধান সড়কগুলো থেকে ট্যাংক সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং এর পরপরই প্রতিবাদী হাজার হাজার লোক আবারও পার্ল স্কয়ারে জড়ো হয়েছেন। তারা সেখানে তাঁবু বসানোর পর পুলিশ আবারও প্রতিবাদীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। তবে সেখানে বিক্ষোভকারীরা তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। বাহরাইনের বাদশাহ জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানের আহ্বান জানালেও প্রধান বিরোধী জোট আল-ওয়েফাক তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

বৃষ্টির ফোঁটা থেকে বিদ্যুত্


কোনো বস্তুর পৃষ্ঠে পানির ফোঁটা পড়ার পর ওই ফোঁটার আকার কেমন হবে, তা নিয়ে বিজ্ঞানী এ এম অর্থিংটন উনিশ শতকে ঢের গবেষণা করেছেন। আপাতদৃষ্টে বস্তুর পৃষ্ঠে তরল বিন্দুর আঘাতের ঘটনা যত সাধারণ মনে হোক না কেন, এর ভেতর লুকিয়ে আছে অতিসূক্ষ্ম গাণিতিককলা কৌশল। বৃষ্টির ফোঁটার আকার, গতি ও বস্তুপৃষ্ঠের গঠনের ওপর নির্ভর করে আঘাতের পর পানির ফোঁটার আকার কেমন হবে। যেমন গাছের পাতায় পানির ফোঁটা পড়ামাত্র কিছুটা লাফিয়ে উঠলেও বাথটাবের গায়ে কিন্তু তা লাগে। আর তাই যে কোনো বস্তুর ওপর সংঘর্ষেই কিন্তু বিদ্যুত্ তৈরি করা সম্ভব হবে না। এমন কিছু বস্তু আছে, যেগুলোকে বল প্রয়োগ করে সংকুচিত বা প্রসারিত করলে বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরি হয়। বিজ্ঞানের ভাষায়, বল প্রয়োগে বস্তুতে ‘তড়িত্ বিভব’ সৃষ্টি হয়। এ ধরনের বস্তুকে বলে ‘পিজিও ইলেক্ট্রিক ম্যাটার’। বৃষ্টির ফোঁটার গতিশক্তিকে তড়িত্শক্তিতে রূপান্তরের জন্য পিজিওইলেক্ট্রিক বস্তুকে কাজে লাগানোর কথাই ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। বৃষ্টির ফোঁটা কোনো পিজিওইলেক্ট্রিক বস্তুকে আঘাত করলে বস্তুটি স্পন্দিত হবে এবং এর মধ্যে চার্জ জমা হতে থাকবে।
ফরাসি সাইক্রোইলেক্ট্রনিক্সের বিশেষজ্ঞরা এমন একটি ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছেন, যার সাহায্যে পিজিওইলেক্ট্রিক বস্তু থেকে উত্পন্ন তড়িত্শক্তি কিছুটা ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব হয়েছে। বৃষ্টির ফোঁটার ব্যাসার্ধ এক থেকে পাঁচ মিলি মিটারের মধ্যে থাকলে এই প্রযুক্তিটি কাজ করে। এ ব্যবস্থা দিয়ে বড় একটি বৃষ্টি ফোঁটা থেকে ১২ মিলিওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত্ পাওয়া যেতে পারে। তারা বৃষ্টি ফোঁটার যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুত্শক্তিতে রূপান্তরের জন্য পিভিডিএফ (পলিভিনাইলিডিন ফোরাইড) পলিমার নামের পিজিওইলেক্ট্রিক বস্তু ব্যবহার করেছেন। বৃষ্টির ফোঁটা ২৫ মাইক্রোমিটার পুরুত্বের পিভিডিএফকে আঘাত করলে এই পলিমারটি স্পন্দিত হয়। তখন এর সঙ্গে যুক্ত ইলেক্ট্রোডগুলোর সাহায্যে এতে উত্পন্ন চার্জ তড়িত্ প্রবাহের সৃষ্টি করে। গবেষকরা মুদ্রাকৃতির পাম্পের সাহায্যে কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরি করে বিভিন্ন আকারের বৃষ্টির ফোঁটা, বিভিন্ন উচ্চতা এবং গতিতে নিক্ষেপ করে এ পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, কম গতিসম্পন্ন ফোঁটাগুলো থেকে বেশি শক্তি পাওয়া যায়। কারণ, অধিক গতিসম্পন্ন ফোঁটাগুলো বস্তুপৃষ্ঠে পড়ামাত্রই ছড়িয়ে পড়ে। গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী ফ্রান্সে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, তাতে এ পদ্ধতিতে বছরে প্রতি বর্গমিটার থেকে এক ওয়াট-ঘণ্টা শক্তি পাওয়া যেতে পারে। মজার ব্যাপার, একটা সাধারণ ‘এ এ’ সাইজের ব্যাটারির ধারণক্ষমতা এক হাজার ৬০০ অ্যাম্পিয়ার-ঘণ্টা বা ২ দশমিক ৪ ওয়াট-ঘণ্টা। এক বর্গমিটারের বৃষ্টির ফোঁটার গতিশক্তি কাজে লাগিয়ে ওই ব্যাটারিচার্জ করতে প্রায় আড়াই বছর লেগে যায়। স্বাভাবিক কারণেই এই সামান্য পরিমাণ বিদ্যুত্শক্তি উত্পাদনের কোনো বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নেই। আর তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা এমন একটি ব্যবস্থা আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন যা দিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ বিদ্যুত্শক্তি সঞ্চিত রাখা যাবে। এর জন্য প্রয়োজন অতিমাত্রায় সংবেদনশীল পিজিওইলেক্ট্রিক বস্তু। আশার কথা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ও ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা লেড জিরকোনেট টাইটানেট বা পিজেডটি দিয়ে একটি পিজিওইলেক্ট্রিক বস্তু তৈরি করেছেন, যা তড়িত্শক্তি উত্পাদনে কোয়ার্টজ থেকে ১০০ গুণ বেশি। পিজেডটি মূলত একটি সিরামিক বস্তু। পিজেডটিতে যান্ত্রিক শক্তির ৮০ শতাংশই বিদ্যুতে রূপান্তরিত হতে পারে।