Monday, February 21, 2011

বাহরাইনের পার্ল চত্বরের দখল নিল ফের বিক্ষোভকারীরা : অনির্দিষ্টকালের শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক : আন্দোলনে নতুন মোড়



আবারও বাহরাইনের রাজধানী মানামার পার্ল চত্বরের দখল নিয়েছে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জনতা। এ সময় গণতন্ত্রকামী জনগণ ‘বিজয় বিজয়’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। সেখান থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ফিরে যাওয়ার পর হাজার হাজার লোক এসে সমবেত হয় পার্ল চত্বরে। মিসরের তাহরির চত্বরের মতো বাহরাইনের পার্ল চত্বর সরকারবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। 
এর আগে সেখান থেকে সেনাবাহিনী চলে গেলেও পুলিশ পার্ল চত্বরে আসা জনগণের ওপর টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। তবে তারা টিয়ারগ্যাস ও পুলিশের সব বাধা উপেক্ষা করে চত্বরে তাদের অবস্থান ধরে রাখে। এরপর সেখানে শুরু হয় মানুষের স্রোত। এ সময় উপায়ান্তর না দেখে পুলিশও কিছুক্ষণ পর সরে পড়ে। গা-ঢাকা দিয়েছে সরকার সমর্থক গুপ্ত ঘাতকরাও। পুলিশ-নিরাপত্তা বাহিনীমুক্ত চত্বরে মানুষ সিজদায় পড়ে যায় এবং খুশিতে তারা মাটিতে চুমু খেতে থাকে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী চলে যাওয়াকে জনগণ তাদের বিজয় বলে মনে করছে। আজ দিনের প্রথম ভাগে বাহরাইনের যুবরাজ শেখ সালমান বিন হামাদ আল-খলিফা সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশ দেন। তবে পুলিশের হামলায় আজ অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনে ৭ জন নিহত ও কয়েকশ’ আহত হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছে ৬৫ জন।
বিক্ষোভকারীরা বলছে, তারা স্কয়ার ছাড়বে না। উল্লাসমুখর বিক্ষোভকারীরা পতাকা ওড়াচ্ছে। সঙ্গে বহন করছে স্লোগান সংবলিত ব্যানার। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ তারা পরোয়া করছে না। তত্পরতার মধ্য দিয়ে তারই প্রতিফলন ঘটছে। তারা প্রয়োজনে অস্থায়ী তাঁবু খাটাচ্ছে। গড়ে তুলছে অস্থায়ী হাসপাতাল। বিক্ষোভরত এক মহিলা দ্বীর্থহীন ভাষায় বলেন, আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই না। সেনারা আসুক, আমাদের হত্যা করুক—আমরা পরোয়া করি না। তারা (সেনা) যে কত নিষ্ঠুর, বিশ্ববাসী তা-ই দেখতে পাবে।
এদিকে বাহরাইনে অনির্দিষ্টকালের জন্য শ্রমিক ধর্মঘট ডেকেছে দেশটির সাধারণ শ্রমিকরা। এর আওতায় বাহরাইন এয়ারলাইন্সও ধর্মঘটে যোগ দিচ্ছে। দেশটিতে চলমান আন্দোলনে সেনাবাহিনী যে দমন অভিযান চালিয়েছে, তার প্রতিবাদে এ ধর্মঘট ডাকা হলো। শ্রমিকদের এ কর্মসূচির ফলে সরকারবিরোধী আন্দোলন নতুন মোড় নিল বলে মনে করা হচ্ছে। 
এদিকে বাহরাইনের রাজধানী মানামার পার্ল চত্বরে আবার বিক্ষোভকারীরা ফিরে এসেছেন। সেখান থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার পর হাজার হাজার লোক গতকাল ফিরে আসে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পার্ল চত্বরে সমবেত কয়েক হাজার লোকের ওপর পুলিশ ও সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছিল। পার্ল চত্বর মিসরের তাহরির চত্বরের মতো আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। 
এর আগে বাহরাইন সরকারের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির বিরোধী জোট। আল-ওয়েফাক জোটের সংসদ সদস্য ইব্রাহিম মাত্তার বলেছেন, আমরা মনে করি সরকার আলোচনার বিষয়ে খুব আন্তরিক নয়। কারণ বিরোধী জোটের আন্দোলন দমনের জন্য এখনও সেনাবাহিনী রাস্তায় রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা না ছাড়া পর্যন্ত আল-ওয়েফাক জোট কোনো আলোচনায় বসবে না। এছাড়া সেনাবাহিনী প্রত্যাহার ও সরকারকে অবশ্যই সাংবিধানিক শাসন চালুর বিষয়টি মেনে নিতে হবে। ইব্রাহিম মাত্তার আরও বলেছেন, এসব শর্ত পূরণ হলে ওয়েফাক জোট আলোচনায় যাবে এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। তবে তাতে বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকতে পারবে না। 
বাদশাহ হামাদ বিন ঈসা আল-খলিফা সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এর জবাবে বিরোধী জোট এসব কথা বলল। অন্যদিকে বাহরাইনে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রমিন মেহমানপারাস্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাহরাইনের সেনাবাহিনীর সহিংস আচরণের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাহরাইনের চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ বাহরাইন হচ্ছে, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সরকারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও কৌশলগত মিত্র। সেখানে মার্কিন পঞ্চম নৌবহর মোতায়েন রয়েছে। এ সম্পর্কে ওয়াশিংটনে বিবিসির সাংবাদিক কিম গিতাস বলেছেন, মার্কিন সরকার মিসরের চেয়ে বাহরাইন পরিস্থিতির জন্য বেশি উদ্বিগ্ন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্র আতঙ্ক বোধ করছে।
এদিকে বাহরাইনের পার্ল স্কয়ারে গণতন্ত্রপন্থী প্রতিবাদীদের ওপর হত্যা ও রক্তাক্ত দমন অভিযানের জন্য দেশটির বাদশাহর ব্রিটিশ উপদেষ্টা ইয়ান হ্যান্ডারসন দায়ী বলে অনেক বাহরাইনি দাবি করছেন। হ্যান্ডারসন ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বাহরাইনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং ৩০ বছর এ পদে বহাল থাকার পর এখন বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ঈসা আল-খলিফার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।
সম্প্রতি বাহরাইনে গণতন্ত্রপন্থী হাজার হাজার প্রতিবাদীর ওপর হত্যা ও রক্তাক্ত দমন অভিযান চালানো হলে ৬ জন নিহত এবং কয়েকশ’ আহত হন। 
বাহরাইনের প্রতিবাদী জনতা রাজতন্ত্রের অবসান দাবি করছেন। বাহরাইনের রাজধানী মানামার প্রধান সড়কগুলো থেকে ট্যাংক সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং এর পরপরই প্রতিবাদী হাজার হাজার লোক আবারও পার্ল স্কয়ারে জড়ো হয়েছেন। তারা সেখানে তাঁবু বসানোর পর পুলিশ আবারও প্রতিবাদীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। তবে সেখানে বিক্ষোভকারীরা তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। বাহরাইনের বাদশাহ জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানের আহ্বান জানালেও প্রধান বিরোধী জোট আল-ওয়েফাক তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।