Monday, February 21, 2011

সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ মেলেনি : ১৫ মার্চ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি



জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আটকের ৮ মাস পরও তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি সরকার। চূড়ান্তভাবে আদালতের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেও তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়ে সরকার আবারও সময়ের আবেদন করেছে। একই আবেদনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করা পর্যন্ত মাওলানা সাঈদীকে আটক রাখার জন্য প্রার্থনা জানানো হয়েছে। এ আবেদনে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আদালত সরকারপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, শুরু থেকেই আপনাদের মুখে একই কথা শুনছি। আগের আবেদনে বলেছেন ‘সাঈদীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে’। আজকের আবেদনেও একই বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যে আবেদন করবেন হয়তো সেখানেও একই বক্তব্যই উল্লেখ করা হবে। আদালত সরকারপক্ষের আইনজীবীদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, কোনো অভিযোগ ছাড়াই বিনা কারণে একটি লোককে কতদিন আটক রাখা যায়? আদালতেরও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। এ মন্তব্য করে আদালত ১৫ মার্চ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। ওইদিন মাওলানা সাঈদীকে আদালতে হাজির করার জন্য নির্দেশ দেন আদালত। এই সঙ্গে আদালত ওই সময়ের মধ্যে মামলার সব নথিপত্র আদালতে দাখিল করার জন্য সরকারপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দেন। 
এদিকে তদন্ত কাজে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনে পিরোজপুরের জিয়ানগর থানায় মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা ৬টি সাধারণ ডায়েরি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলে আদালতে তথ্য উপস্থাপন করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি বলেন, গত বছর জুন মাসে মাওলানা সাঈদীকে কোনো কারণ ছাড়াই আটক করে কারাগারে অন্তরীণ করে রাখা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে সরকার তাকে আটক রাখার জন্য এই ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে। বহু তদন্ত ও অনুসন্ধান করেও তার বিরুদ্ধে মানবতা কিংবা যুদ্ধাপরাধ তো দূরের কথা, কোনো ধরনের অপরাধেরই বিন্দুমাত্র উপাদান খুঁজে পায়নি সরকার। ফলে সরকার এখন সময় নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণ দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে। সরকারপক্ষের এ আবেদনের ওপর আদালত মাওলানা সাঈদীর উপস্থিতিতে ২০ ফেব্রুয়ারি শুনানির তারিখ ধার্য করেন। আদালতের পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কড়া পুলিশি পাহারায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। বেলা ১১টার দিকে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। 
চিকিত্সা ও জামিনের আবেদন : অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বিভিন্ন দেশের ট্রাইব্যুনালের রেফারেন্স উল্লেখ করে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি অনুযায়ী বিচার শুরুর আগে আসামিকে জামিন দেয়ার বিধান রয়েছে। যেহেতু সরকার কয়েক দফায় সময় নিয়েও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উপস্থাপন করতে পারেনি, কাজেই সঙ্গত কারণেই আদালত তার জামিন মঞ্জুর করবেন। আমরা যে কোনো শর্তে জামিনের প্রার্থনা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, মাওলানা সাঈদী একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। সারা দেশে তার লাখ লাখ ভক্ত ও অনুরাগী রয়েছেন। তাকে জামিনে মুক্তি দিলে তিনি পালিয়ে যাবেন না। চিকিত্সার আবেদন করে তিনি বলেন, সাঈদী সাহেব হার্টের রোগী। তার বুকে দুটি রিং বসানো হয়েছে। এছাড়াও তার শরীরে বিভিন্ন জটিল রোগ রয়েছে। যে কোনো একটি কার্ডিয়াক হাসপাতালে তাকে উন্নত চিকিত্সা দেয়া প্রয়োজন। চিকিত্সার জন্য একটি লিখিত আবেদন পেশ করার পরামর্শ দিয়ে আদালত বলেন, আপনি একটি আবেদন করেন। আদালত এটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন। আদালতে শুনানিকালে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ছাড়াও অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, ফরিদউদ্দিন খান, কামালউদ্দিন আহমেদসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মাওলানা সাঈদীর আত্মীয়-স্বজন ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান চৌধুরী, জসিমউদ্দিন সরকার উপস্থিত ছিলেন।