Monday, February 21, 2011

বৃষ্টির ফোঁটা থেকে বিদ্যুত্


কোনো বস্তুর পৃষ্ঠে পানির ফোঁটা পড়ার পর ওই ফোঁটার আকার কেমন হবে, তা নিয়ে বিজ্ঞানী এ এম অর্থিংটন উনিশ শতকে ঢের গবেষণা করেছেন। আপাতদৃষ্টে বস্তুর পৃষ্ঠে তরল বিন্দুর আঘাতের ঘটনা যত সাধারণ মনে হোক না কেন, এর ভেতর লুকিয়ে আছে অতিসূক্ষ্ম গাণিতিককলা কৌশল। বৃষ্টির ফোঁটার আকার, গতি ও বস্তুপৃষ্ঠের গঠনের ওপর নির্ভর করে আঘাতের পর পানির ফোঁটার আকার কেমন হবে। যেমন গাছের পাতায় পানির ফোঁটা পড়ামাত্র কিছুটা লাফিয়ে উঠলেও বাথটাবের গায়ে কিন্তু তা লাগে। আর তাই যে কোনো বস্তুর ওপর সংঘর্ষেই কিন্তু বিদ্যুত্ তৈরি করা সম্ভব হবে না। এমন কিছু বস্তু আছে, যেগুলোকে বল প্রয়োগ করে সংকুচিত বা প্রসারিত করলে বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরি হয়। বিজ্ঞানের ভাষায়, বল প্রয়োগে বস্তুতে ‘তড়িত্ বিভব’ সৃষ্টি হয়। এ ধরনের বস্তুকে বলে ‘পিজিও ইলেক্ট্রিক ম্যাটার’। বৃষ্টির ফোঁটার গতিশক্তিকে তড়িত্শক্তিতে রূপান্তরের জন্য পিজিওইলেক্ট্রিক বস্তুকে কাজে লাগানোর কথাই ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। বৃষ্টির ফোঁটা কোনো পিজিওইলেক্ট্রিক বস্তুকে আঘাত করলে বস্তুটি স্পন্দিত হবে এবং এর মধ্যে চার্জ জমা হতে থাকবে।
ফরাসি সাইক্রোইলেক্ট্রনিক্সের বিশেষজ্ঞরা এমন একটি ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছেন, যার সাহায্যে পিজিওইলেক্ট্রিক বস্তু থেকে উত্পন্ন তড়িত্শক্তি কিছুটা ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব হয়েছে। বৃষ্টির ফোঁটার ব্যাসার্ধ এক থেকে পাঁচ মিলি মিটারের মধ্যে থাকলে এই প্রযুক্তিটি কাজ করে। এ ব্যবস্থা দিয়ে বড় একটি বৃষ্টি ফোঁটা থেকে ১২ মিলিওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত্ পাওয়া যেতে পারে। তারা বৃষ্টি ফোঁটার যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুত্শক্তিতে রূপান্তরের জন্য পিভিডিএফ (পলিভিনাইলিডিন ফোরাইড) পলিমার নামের পিজিওইলেক্ট্রিক বস্তু ব্যবহার করেছেন। বৃষ্টির ফোঁটা ২৫ মাইক্রোমিটার পুরুত্বের পিভিডিএফকে আঘাত করলে এই পলিমারটি স্পন্দিত হয়। তখন এর সঙ্গে যুক্ত ইলেক্ট্রোডগুলোর সাহায্যে এতে উত্পন্ন চার্জ তড়িত্ প্রবাহের সৃষ্টি করে। গবেষকরা মুদ্রাকৃতির পাম্পের সাহায্যে কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরি করে বিভিন্ন আকারের বৃষ্টির ফোঁটা, বিভিন্ন উচ্চতা এবং গতিতে নিক্ষেপ করে এ পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, কম গতিসম্পন্ন ফোঁটাগুলো থেকে বেশি শক্তি পাওয়া যায়। কারণ, অধিক গতিসম্পন্ন ফোঁটাগুলো বস্তুপৃষ্ঠে পড়ামাত্রই ছড়িয়ে পড়ে। গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী ফ্রান্সে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, তাতে এ পদ্ধতিতে বছরে প্রতি বর্গমিটার থেকে এক ওয়াট-ঘণ্টা শক্তি পাওয়া যেতে পারে। মজার ব্যাপার, একটা সাধারণ ‘এ এ’ সাইজের ব্যাটারির ধারণক্ষমতা এক হাজার ৬০০ অ্যাম্পিয়ার-ঘণ্টা বা ২ দশমিক ৪ ওয়াট-ঘণ্টা। এক বর্গমিটারের বৃষ্টির ফোঁটার গতিশক্তি কাজে লাগিয়ে ওই ব্যাটারিচার্জ করতে প্রায় আড়াই বছর লেগে যায়। স্বাভাবিক কারণেই এই সামান্য পরিমাণ বিদ্যুত্শক্তি উত্পাদনের কোনো বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নেই। আর তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা এমন একটি ব্যবস্থা আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন যা দিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ বিদ্যুত্শক্তি সঞ্চিত রাখা যাবে। এর জন্য প্রয়োজন অতিমাত্রায় সংবেদনশীল পিজিওইলেক্ট্রিক বস্তু। আশার কথা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ও ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা লেড জিরকোনেট টাইটানেট বা পিজেডটি দিয়ে একটি পিজিওইলেক্ট্রিক বস্তু তৈরি করেছেন, যা তড়িত্শক্তি উত্পাদনে কোয়ার্টজ থেকে ১০০ গুণ বেশি। পিজেডটি মূলত একটি সিরামিক বস্তু। পিজেডটিতে যান্ত্রিক শক্তির ৮০ শতাংশই বিদ্যুতে রূপান্তরিত হতে পারে।