Friday, February 25, 2011

সবার আগে মানবাধিকারের ঘোষণা দিয়েছেন মহানবী (সা.)


হজরত মোহাম্মদের (সা.) ভাষণসমূহ : একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সমীক্ষা’ শিরোনামে থিসিস করেছেন ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তার থিসিসের বিষয়-বৈশিষ্ট্য নিয়ে সাক্ষাত্কারে তিনি জানান, বিভিন্ন ভাষণে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) শাশ্বত ও সর্বোচ্চ মানবাধিকারের ঘোষণা পৃথিবীতে সবার আগে দিয়ে গেছেন। মহানবীর (সা.) ভাষণগুলো মানুষ ও মানবতার প্রতি তাঁর স্বর্ণালী অবদানের উজ্জ্বল স্বাক্ষর। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন শরীফ মুহাম্মদ

মানবতার নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের পুরোটাই ছিল মানুষ ও মানবতার স্বর্ণালী আদর্শ ও শিক্ষায় ভরপুর। বাস্তব আচরণ ও ঘটনার বাইরে তাঁর ভাষণ-বক্তব্য থেকেও এর অগণিত নমুনা পাওয়া যায়। ব্যাপকভাবে এ প্রসঙ্গে আমরা শুধু বিদায় হজের ভাষণের কথাই জানি ও আলোচনায় আনি। কিন্তু তাঁর জীবনের প্রায় সব ভাষণ-বক্তব্যেই মানুষ ও মানবতার প্রতি তাঁর অবদানের তথ্যটি ফুটে ওঠে। ‘হজরত মোহাম্মদের (সা.) ভাষণসমূহ : একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সমীক্ষা’ শিরোনামে থিসিস সম্পন্ন করে পিএইচডি অর্জন করা অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এ কথা জানান।
চট্টগ্রাম ওমর গণি এমইএস কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক ড. খালিদকে ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বিষয়ে ডিগ্রিটি দেয়া হয়। ৩৭০ পৃষ্ঠায় রচিত তার থিসিসটিতে রয়েছে আটটি অধ্যায়। থিসিসটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ। পরীক্ষক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবির অধ্যাপক ড. আবু বকর সিদ্দিক ও ভারতের লক্ষেষ্টৗ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামী সভ্যতা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শিব্বির আহমদ। ড. খালিদ জানান, তিনি তার থিসিসে মহানবীর (সা.) ৮১টি ভাষণ সংগ্রহ, ভাষান্তর ও বিশ্লেষণ করেন। ভাষণগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিদায় হজের ভাষণ, মক্কা বিজয়, তাবুক প্রান্তর, গাদির খুম, বদর, ওহুদ প্রান্তর, মদিনার প্রথম ভাষণ, দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্কতা, মুহাজির-আনসারের সমাবেশ, মক্কায় নেতৃস্থানীয়দের জন্য আয়োজিত ভোজসভা, আকাবা উপত্যকা, মসজিদে নববী ও মুতার যোদ্ধাদের বিদায় দানকালে দেয়া ভাষণগুলো।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন জানান, মহানবীর (সা.) ভাষণে সামাজিক নিরাপত্তা, অসাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের প্রেরণা ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা রক্ষার চেতনা প্রস্ফুটিত। এছাড়াও মহানবীর (সা.) ভাষণে রয়েছে ধর্মের সঙ্গে সমাজ-সংস্কৃতির সম্পর্ক, মানবাধিকার, নারীর মর্যাদা ও শিশুর অধিকার, অধীনস্থদের সঙ্গে মানবিক আচরণ, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, যুদ্ধক্ষেত্রে নৈতিকতা, মানবসেবা, ক্ষমা ও ঔদার্য, বাড়াবাড়ি বিষয়ে সতর্কতা, খতমে নবুওয়ত, জিহাদ, সুদমুক্ত অর্থনীতি, আত্মীয়তার সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ, ব্যক্তি ও ব্যাষ্টিক দায়িত্ববোধ, সামাজিক ন্যায়বিচার, দাসমুক্তি, বর্ণ ও গোত্রীয় বৈষম্যের অবসান এবং শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কিত বহুবিধ নির্দেশনা ও আলোকপাত।
মানবাধিকার রক্ষায় মহানবীর (সা.) ভাষণ ও নির্দেশনার ভূমিকা সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিভিন্ন ভাষণের ধারাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মহানবী (সা.) শাশ্বত ও সর্বোচ্চ মানবাধিকারের ঘোষণা সবার আগে দিয়ে গেছেন। ১২১৫ সালের ম্যাগনাকার্টা, ১৬২৮ সালের পিটিশন অব রাইটস, ১৬৭৯ সালের হেবিয়াস কর্পাস অ্যাক্ট, ১৬৮৯ সালের বিল অব রাইটস এবং ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা মানুষের সামনে আসার বহু শত বছর আগেই মানবতার ঝাণ্ডাবাহী মহানবীর (সা.) ভাষণে মানুষের আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার ঘোষিত হয়েছে।
থিসিস সম্পন্ন করতে ড. খালিদ তিনটি দেশের বিভিন্ন ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও লাইব্রেরি মন্থন এবং পৃথিবী বিখ্যাত ইসলামী স্কলারদের সাক্ষাত্কার গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে নির্দিষ্টভাবে ৮৬টি আরবি, ৮৫টি ইংরেজি, ৩০টি উর্দু, ৬টি ফার্সি, ৫টি বাংলা গ্রন্থ ও ১৫টি সাময়িকী অধ্যয়ন করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিরাত বিশ্বকোষের চতুর্দশ খণ্ডে তার থিসিস থেকে নেয়া মহানবীর (সা.) ভাষণগুলো মূল আরবিসহ বাংলা তরজমা ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খুতবাসমূহ’ নামে ছাপা হয়েছে। ষ