Wednesday, March 16, 2011

ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষ


নবাগত শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানো নিয়ে রংপুরের কারমাইকেল কলেজ ও কক্সবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষে ৭০ আহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৩৩ জন। এ ঘটনায় কারমাইকেল কলেজ ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও ৪ দিন ক্লাস স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা হয়েছে কক্সবাজার সরকারি কলেজও।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, রংপুর কারমাইকেল কলেজে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ৫ শিবির নেতাসহ ২১ জন ছাত্রকে আটক করেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের ৪টি হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। 
গতকাল কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের পরিচিতি ক্লাস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। শিবিরকে মিছিলের অনুমতি না দেয়ায় তারা মিছিল না করেই কলেজের তৃতীয় ভবনের কদমতলা এলাকায় ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা জড়ো হয়। দুপুর ১২টায় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে দিনাজপুর কলেজের ছাত্রলীগ নেতা শাহিনুর রহমান গাজী ওরফে হারুন ছাত্রশিবির কর্মী রফিকুল ইসলাম রফিককে মারধর করে। এ ঘটনার পর ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে উভয় পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে কলেজ ক্যাম্পাসজুড়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে থাকেন। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে উভয় পক্ষকে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে সংঘর্ষকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ সময় হারুন, সোহেল, আলামিন, শাকিল, নাফিজ, রনি, হামিদুর, মজিদ, শরীফ হীরা, মামুন ও অজ্ঞাতনামা এক ভিখারি গুরুতর আহত হয়। সংঘর্ষের ছবি তোলার সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপে দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, ফটো সাংবাদিক শাকিল আহমদ, শাহিদুর রহমানসহ ৫ ফটো সাংবাদিক আহত হন। 
দুপুর ১২টা থেকে থেমে থেমে এই সংঘর্ষ বেলা ২টা পর্যন্ত চলতে থাকে। পরে আরও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশ ছাত্রশিবিরের ২১ জনকে আটক করে। এ ঘটনার পর পরই কলেজের ওসমানী হলে তল্লাশি চালিয়ে লাঠিসোঁটা উদ্ধার করা হয়। একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় ওসমানী, জিএল, কেবি ও সিএম ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ছাত্রদের গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে ছাত্রাবাস ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 
ছাত্রশিবিরের রংপুর শহর সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ জানান, বিনা উস্কানিতে দিনাজপুর সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের বহিরাগত সন্ত্রাসী কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে এসে তাদের ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম রফিককে মারধর করে গুরুতর আহত করেছে। এরপর ছাত্রলীগের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সমাবেশে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ৩০ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে। তিনি আটককৃত শিবির নেতাসহ সাধারণ ছাত্রদের মুক্তি দাবি করেন।
ছাত্রলীগের কলেজ আহ্বায়ক জাকারিয়া আলম শিপলু জানান, নবাগত ছাত্রছাত্রীদের বরণ করে নিতে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে মিছিল বের করলে শিবির কর্মীরা তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চলায়। এতে তাদের ১০/১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। 
কলেজের অধ্যক্ষ ড. দীপ কেন্দ্র নাথ সাংবাদিকদের জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় কলেজের ৪টি ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ দিন ক্লাস স্থগিত রয়েছে। তবে কলেজে সব পরীক্ষা যথারীতি চলবে।
ওদিকে কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে কলেজ ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এই সংঘর্ষে কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ ক্যাডাররা কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষসহ পুরো কলেজে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কক্সবাজার মডেল থানা পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রচুর সময় লাগে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১২ ছাত্রকে আটক করেছে। ঘটনায় আহতদের মধ্যে ৭ জন জেলা সদর হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছে। এদের মধ্যে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক সলিমুর রহমান ও স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র ছাত্রলীগ নেতা হালিমুর রশিদকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এই ঘটনার জন্য ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবির একে অপরকে দোষারোপ করছে। অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রথম ক্লাস উপলক্ষে তাদের স্বাগত জানানোকে কেন্দ্র এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কলেজের শিক্ষক পরিষদের জরুরি সভায় আজ কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 
এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে জেলা ছাত্রলীগ গতকাল বিকালে কক্সবাজার শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও আজ সকাল ১০টায় কক্সবাজার কলেজ ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছে। 
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েক শিক্ষার্থী জানায়, গতকাল ছিল অনার্স প্রথম বর্ষ শিক্ষার্থীদের উদ্বোধনী ক্লাস। কলেজের মূল ভবনের সামনে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবির দুই সারিতে দাঁড়িয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর উদ্যোগ নেয়। ওই সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত হয়। এখান থেকেই শুরু হয় সংঘর্ষ। কিছুক্ষণের মধ্যেই সংঘর্ষ পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। 
দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলায় দুই পক্ষেরই অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সলিমুর রহমানসহ শিক্ষকরা পরিস্থিতি থামানোর চেষ্টা করতে গিয়ে হামলার শিকার হন। ওই সময় কলেজ অধ্যক্ষ ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মুজিবুল আলম আহত হন। শিক্ষক মুজিবুল আলমের মাথা ফেটে গেছে। তাদের দুজনকেই জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 
প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল্লাহ আল মামুন ও শেফা উদ্দিন জানায়, সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগের হামলার ছবি তুলতে গেলে ইসলামিক টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি আবদুল্লাহ নয়ন হামলার শিকার হয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়। 
প্রশাসনিক ভবনের নিচ তলায় ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষ ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। 
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের আজাদ জানান, ছাত্রশিবিরই ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রলীগের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়। 
তিনি অবশ্য আহত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নাম জানাতে পারেননি। তিনি আরও দাবি করেন, ছাত্রলীগ কলেজে কোনো ধরনের ভাংচুর চালায়নি। 
ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি কামরুল হাসান জানান, শিবিরের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করার জন্য দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ছাত্রলীগে নেতাকর্মীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কাধাক্কি করে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করেছে। 
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর পুলিশ এলেও পুলিশ ছাত্রলীগের হয়েই কাজ করেছে। পুলিশের উপস্থিতিতেই কলেজে ভাংচুর করা হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আলী আহমদ এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। 
কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, ঘটনা শুরু হওয়ার পর শিক্ষকরা দুপক্ষকেই থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। ওই সময় কলেজ অধ্যক্ষ ও শিক্ষক মুজিবুল আলম গুরুতর আহত হন। 
কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, ঘটনা জানার পরই পুলিশের কয়েকটি দল ঘটনাস্থলে যায়। তিনি নিজেই উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছেন।