Wednesday, February 16, 2011

ধর্মনিরপেক্ষতা চাপানোর অপচেষ্টা
 চালানো থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি
 জামায়াতের আহবান
সংবিধান সংশোধন ও পুনর্মুদ্রণের নামে
 ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা
 জাতি মানবে না
সংবিধান বহির্ভূত প্রক্রিয়ায় সংবিধান সংশোধন করে জাতির ঘাড়ে ধর্মনিরপেক্ষতা চাপিয়ে দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা চালানো থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, সংবিধান বহির্ভূত পন্থায় সংবিধান সংশোধন করে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার নামে সরকার জাতির ঘাড়ে ধর্মনিরপেক্ষতা চাপিয়ে দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করার যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাতে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তারা বলেন, সংবিধান সংশোধনের নামে সরকার দেশে যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে তাতে দেশবাসী শঙ্কিত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন মীমাংসিত ইস্যুকে সামনে এনে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে জাতিকে পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইসলামী আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে সরকার বাংলাদেশ থেকে মূলত ইসলামী রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ধ্বংস করার জন্যই সংবিধান বহির্ভূত পন্থায় সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে।
তারা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আইন হলো সংবিধান। সংবিধান সংশোধনের পন্থাও স্পষ্টভাবে সংবিধানেই বর্ণনা করা হয়েছে। সংবিধানের নতুন কোন ধারা সন্নিবেশিত করতে হলে বা নতুন কোন আইন প্রণয়ন করতে হলে এবং সংবিধানের কোন ধারা বাতিল করতে হলে তা অবশ্যই সংসদেই করতে হবে। সংসদকে পাশ কাটিয়ে অন্য কোথাও তা করা যাবে না। এ ছাড়া সংবিধানের প্রিএম্বলসহ ৮, ৪৮ ও ৫৬-এর মত কিছু ধারা সংশোধন করতে হলে তার জন্যে গণভোট অনুষ্ঠান করতে হবে।
তারা আরো বলেন, সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ স্পষ্ট ভাষায় বিধান দিয়েছে যে, সংবিধানের যে কোন বিধান সংযোজন, পরিবর্তন বা প্রতিস্থাপন বা রহিতকরণ করতে হবে কেবল মাত্র ‘সংসদের আইন দ্বারা' মোট সংসদ সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে। সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ মানতে হবে। জাতীয় সংসদে আইন পাস করার পর সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তারপর সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করতে হবে। কোন আইন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হলে ৭ (২) অনুচ্ছেদ মোতাবেক সংবিধানই প্রাধান্য পায়, অন্য কোন আইন নয়। কাজেই সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ উপেক্ষা করে সংবিধান সংশোধন করে পুনর্মুদ্রণ করা হলে তা টিকবে না। ছলে বলে কৌশলে সংসদের সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে জাতির ঘাড়ে ধর্মনিরপেক্ষতা চাপিয়ে দিয়ে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোন চেষ্টা জাতি মানবে না।
নেতৃদ্বয় বলেন, ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদে সকল দল মিলে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন কেয়ারটেকার সরকারকে বৈধতা দিয়েছিল। সংসদে বিল পাস করার পরে গণভোটের মাধ্যমে তা পাস করা হয়েছিল। এসব নজিরকে উপেক্ষা করে আজকে যে প্রক্রিয়ায় সংসদকে পাশ কাটিয়ে সংবিধান সংশোধন ও পুনর্মুদ্রণ করার নামে ধর্মনিরপেক্ষ জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে তা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
নেতৃদ্বয় আরো বলেন, জাতীয় সংসদ জনগণের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। দেশের সংবিধান জনগণের সম্পত্তি। সংবিধানে কোন ধারা সন্নিবেশিত করতে হলে বা বাতিল করতে হলে তা অবশ্যই জাতীয় সংসদ সদস্যদের আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় সংসদে বিল পাস করার মধ্য দিয়েই করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের আলোচনার সুযোগ না দিয়ে জাতিকে না জানিয়ে সংসদকে পাশ কাটিয়ে যদি সংবিধানের কোন ধারা সন্নিবেশিত করে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে তা এই দেশের ইতিহাসে একটি কু-নজির হয়ে থাকবে এবং জনগণ তা কিছুতেই মেনে নেবে না। অন্যদিকে সংবিধানের যে সব ধারা সংশোধনের জন্যে গণভোট প্রয়োজন সে সব ধারা সংশোধনে গণভোট এড়িয়ে যথেচ্ছাচার চালানো জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। তারা আরো বলেন, সরকার যে প্রক্রিয়ায় জাতির ঘাড়ে বাহাত্তর সালের সংবিধানের নামে ধর্মহীনতা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে সে ব্যাপারে বাংলাদেশের সকল বিরোধী দলের প্রবল আপত্তি রয়েছে। সংসদকে পাশ কাটিয়ে অন্য কোথাও কোন সাংবিধানিক ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার চেষ্টা কার্যত সংসদের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতাকে অস্বীকার করার শামিল।
দেশের জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার নামে সংবিধান বহির্ভূত পন্থায় সংবিধান সংশোধন ও পুনর্মুদ্রণ করার মাধ্যমে জাতির ঘাড়ে ধর্মনিরপেক্ষতা চাপিয়ে দিয়ে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করে জাতিকে বিভক্ত করে দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো থেকে বিরত থাকার জন্য তারা সরকারের প্রতি আহবান জানান।