Wednesday, February 23, 2011

লিবিয়ায় আতঙ্কে বাংলাদেশীরা কমিউনিটি সেন্টারে ৪৫০ জিম্মি


দীন ইসলাম: লিবিয়ায় জিম্মি থাকা ৪৫০ বাঙালি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অঘটনের আশঙ্কায় বাইরে বেরুচ্ছেন না তারা। চলছে তীব্র খাবার সঙ্কট। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জিম্মি বাঙালিরা সুস্থ আছেন। তাদের আটক করে রাখা হয়েছে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ১৩০০ কিলোমিটার দূরে বেনগাজি দারনায়। ওই জায়গার ‘দারনা কমিউনিটি সেন্টার’-এ তাদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের ক’জন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও জিম্মি থাকা ক’জন বাঙালি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে গতকাল লিবিয়ায় জিম্মি থাকা বাংলাদেশীদের সম্পর্কে সবিস্তারে অবহিত করেন ওই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত প্রথম সচিব (শ্রম) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান ও যুগ্ম-সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জিম্মি থাকা বাংলাদেশীরা লিবিয়ার ‘অওন কনস্ট্রাকশন’ নামের একটি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার এ কোম্পানিটির মালিক একজন কোরিয়ান নাগরিক। গত রোববার এ কোম্পানিটির শ্রমিকদের ব্যারাকে হামলা চালায় লিবীয় নাগরিকরা। ওই ব্যারাকে বাংলাদেশী শ্রমিকের পাশাপাশি ভিয়েতনাম, কোরিয়া ও থাইল্যান্ডের শ্রমিকরা থাকতেন। একসঙ্গে সবার ওপর হামলা চালানোর পরপরই শ্রমিকরা বেনগাজির একটি মাদরাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর সরকারের নিয়োজিত বাহিনী তাদের সরিয়ে একটি কমিউনিটি সেন্টারে জিম্মি করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এখন তীব্র খাবার সঙ্কটে পড়েছেন জিম্মিরা। এজন্য লিবিয়ার অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস কোরিয়ান কোম্পানি ‘অওন কনস্ট্রাকশন’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন জিম্মি থাকা বাঙালিদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য। ওদিকে লিবিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে ৬০ হাজার বাংলাদেশী কাজ করছেন। রাজনৈতিক হাঙ্গামা শুরু হওয়ার পর ওইসব বাঙালি এখন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্কটের মধ্যেও ১১ শ্রম উইংয়ের কর্মকর্তা ঢাকায়
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এখন চলছে রাজনৈতিক সঙ্কট। এর মধ্যেও ১১টি দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত ১৪ জন শ্রম উইংয়ের কর্মকর্তাকে ঢাকায় ডেকে আনা হয়েছে। তাদেরকে ওই সব দেশে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এনিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কয়েক জন শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তার মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে এখন চলছে রাজনৈতিক সঙ্কট। এ সঙ্কটে বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রতি নজর দেয়া জরুরি। এর অন্যথা হলে শ্রমিকদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দা এবং মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে কর্মরত কাউন্সিলর (শ্রম) ও প্রথম সচিব (শ্রম), লিবিয়া, ইরাক, বাহরাইন, কুয়েত, দুবাই, কাতার ও ওমানের প্রথম সচিব (শ্রম) এবং আবু ধাবির কাউন্সিলরকে (শ্রম) ঢাকায় আনা হয়েছে। আগামী দুই দিন জনশক্তি বাড়ানোর বিষয়ে তাদের নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল প্রথম দিনে শ্রম উইংয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানির হার এখন আশানুরূপ নয়। এখনই বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে। অন্যথায় আগামীতে ভাল করতে পারবো না। এরপর তিনি বিভিন্ন দেশে কর্মরত শ্রম উইংয়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য শোনেন। এর মধ্যে লিবিয়ায় কর্মরত প্রথম সচিব (শ্রম) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী ওই দেশে কর্মরত বাঙালিদের সর্বশেষ অবস্থা বর্ণনা করেন। এরপরের সেশনে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান। তারা শ্রম বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করার উপর গুরুত্ব দেন।
বাংলাদেশে লিবীয় রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগ
বাংলাদেশে নিযুক্ত লিবীয় রাষ্ট্রদূত আহমেদ আতিয়া হামাদ আল-ইমান পদত্যাগ করেছেন। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে নিশ্চিত করেছে লিবিয়া সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগের জন্য ঢাকায় লিবীয় দূতাবাসের অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি (কো-অপারেশন) এশতিউই এলফিলাইদনি চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ওদিকে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফীর ৪১ বছরের শাসনের অবসান ঘটাতে দেশটির হাজার হাজার মানুষ গত বুধবার থেকে বিক্ষোভ করছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি ও সংঘর্ষে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৩৩ জন নিহত হয়েছে। এই সহিংসতা ও সরকারের দমন নীতির প্রতিবাদে চীন, যুক্তরাজ্য, ভারত, পোল্যান্ড, সুইডেন, আরব লীগ, বেলজিয়াম, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়া ও জাতিসংঘে নিযুক্ত লিবিয়ার উপরাষ্ট্রদূত এবং কয়েকটি দেশে লিবিয়ার দূতাবাসের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানানো হয়।