Wednesday, February 23, 2011

সৌরঝড়ের কারণে পৃথিবীতে নেমে আসতে পারে মহাবিপর্যয়


বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সৌরঝড়ের প্রভাবে পৃথিবীর বুকে শিগগিরই এক বৈশ্বিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাঁদের আশঙ্কা, সৌরঝড়ের কারণে মহাকাশে স্থাপিত কৃত্রিম উপগ্রহ এবং বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ-ব্যবস্থাপনা বিকল হয়ে যেতে পারে। আসন্ন ওই মহাবিপর্যয়কে তাঁরা ‘গ্লোবাল ক্যাটরিনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এতে সারা বিশ্বে অন্তত দুই ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হবে।
যুক্তরাজ্য সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা জন বেডিংটন গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্সের (এএএএস) বার্ষিক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে এ হুঁশিয়ারি দেন। পরে সংশ্লিষ্ট অন্য বিজ্ঞানীরা তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তাঁরা বলেছেন, সূর্যের অভ্যন্তরে চলমান অগ্নিঝড়ের দমকা পর্যায়ক্রমে বাড়তে ও কমতে থাকে। প্রতি ১১ বছরে একবার সৌরঝড়ের প্রচণ্ডতা সর্বোচ্চমাত্রায় ওঠে। তাঁরা বলেছেন, হিসাব অনুযায়ী ২০১৩ সালে সর্বোচ্চমাত্রার সৌরঝড় হওয়ার কথা।
একেকটি দমকার সঙ্গে প্রচণ্ড তাপবাহী সৌরশিখা সৌরজগতে ছড়িয়ে পড়ে। এই শিখার সঙ্গে বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তেজস্ক্রিয়তার (ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন) আণবিক বিস্ফোরণ ঘটে। তেজস্ক্রিয় শিখা যখন পৃথিবীর দিকে আসতে থাকে, তখন বায়ুমণ্ডলের বাইরের পরিমণ্ডল বিদ্যুতায়িত হয়ে ওঠে। এতে ভূ-পৃষ্ঠে থাকা মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও মহাশূন্যে প্রতিস্থাপিত কৃত্রিম জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) ভূ-উপগ্রহ এবং অন্যান্য গবেষণা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে অবস্থিত স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টারের পরিচালক টমাস বগড্যান বলেছেন, জিপিএস আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। এর সঙ্গে বিমান চলাচল, ইন্টারনেট সেবা, টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ সবকিছু নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে গাড়িতে এক গ্যালন তেল ভরতে গেলেও ইন্টারনেট যোগাযোগের দরকার। এ ব্যবস্থা বিগড়ে গেলে সারা পৃথিবীর যাবতীয় স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যাবে।
আরেকটি বিষয় হলো, সৌরঝড়ে সৃষ্ট প্রচণ্ড শক্তিশালী বিদ্যুৎতরঙ্গ পৃথিবীর ম্যাগনেটোস্ফেয়ারকে আঘাত করলে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইন ও গ্যাসের পাইপলাইনেও সে তরঙ্গে স্পৃষ্ট হতে পারে। এর ফলে বিদ্যুৎব্যবস্থা অচল হয়ে গাঢ় অন্ধকারে ডুবে যেতে পারে পৃথিবী।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সৌরঝড়ের তেজস্ক্রিয় প্রবাহ প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। গার্ডিয়ান অনলাইন।