Wednesday, February 23, 2011

জাতির উদ্দেশে ভাষণে গাদ্দাফি : আমি বেদুঈন যোদ্ধা : শহীদ হতে জানি : বাংলাদেশী জিম্মি নেই : দীপু মনি


লিবিয়া পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। প্রেসিডেন্ট মোয়াম্মার আল গাদ্দাফি জাতির উদ্দেশে ভাষণে ক্ষমতা ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, জনতা শান্ত না হলে বলপ্রয়োগে বাধ্য হবেন। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, জনতার ওপর বিমান ও হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে হামলা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে তিন শতাধিক লোক নিহত হয়েছে বলে সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠকে বসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অসহায় জনসাধারণের ওপর হামলা বন্ধ করতে লিবিয়া কর্তৃৃৃৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বিরোধীদলের প্রতি এই দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বইছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত লিবিয়ার রাষ্ট্রদূতরা এর প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন। রয়টার্স, আল জাজিরা, এএফপি, বিবিসি
এদিকে
লিবিয়ায় শতাধিক বাংলাদেশীকে জিম্মি করা হয়েছে বলে প্রকাশিত খবর সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি। লিবিয়া থেকে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।
ওদিকে লাগাতার অশান্তির ফলে লিবিয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজধানী ত্রিপলিতেও খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দলে দলে সরকারি কর্মকর্তারা পদত্যাগ করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যেই বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে বোমা ও রকেট হামলার খবর দিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফির ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে তার অনুগত সৈন্যরা সাধারণ জনতার ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। লিবিয়া সঙ্কটের এখনও কোনো সমাধানসূত্র দেখা যাচ্ছে না। সরকার ও বিরোধীপক্ষ নিজেদের অবস্থানে অটল রয়েছে।
গাদ্দাফি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে যে গুজব উঠেছিল তা মিথ্যা প্রমাণিত করে গাদ্দাফি গতকাল টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ধিক তাদেরকে যারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। আমি বেদুঈন যোদ্ধা। লিবিয়ার গৌরব আমার হাতে অর্জিত হয়েছে। আমি শহীদ হয়ে মরব তবুও দুষ্কৃতকারীদের সুযোগ দেব না। তারা বিশেষ একটি গোষ্ঠী শয়তানের সহায়তায় লিবিয়ায় অশান্তি সৃষ্টির প্রয়াস পাচ্ছে। তিনি বলেন, এখনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করা হয়নি। ওরা শান্ত না হলে শক্তি প্রয়োগ করা হবে বলে তিনি হুশিয়ার করে দেন।
গাদ্দাফি তার অনুগত জনসাধারণের প্রতি এই বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় বেরিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বিভিন্ন দেশে কর্মরত লিবিয়ার কূটনীতিকরা পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন। সেনাবাহিনীতেও বিভক্তির খবর পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম লিবিয়া থেকে স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশন করতে না পারায় সেখানকার সঠিক চিত্র তুলে ধরা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিমানবাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর বোমা হামলা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর একাংশ বেঁকে বসায় আফ্রিকার অন্যান্য দেশ থেকে ভাড়াটে সৈন্য এনে তাদের দিয়ে দমন নিপীড়ন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগও উঠছে। সরকারিভাবে অবশ্য বিক্ষোভকারীদের হত্যালীলার অভিযোগ অস্বীকার করছে। এদিকে লাগাতার অশান্তির ফলে দেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি রাজধানী ত্রিপলিতেও খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এদিকে লিবিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠকে বসেছে।
লিবিয়ায় কোনো বাংলাদেশী জিম্মি অবস্থায় নেই : আমাদের কূটনৈতিক রিপোর্টার জানান, লিবিয়ায় কোনো বাংলাদেশী জিম্মি বা আটক অবস্থায় নেই। লিবিয়া থেকে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং পররাষ্ট্র সচিব এই তথ্য জানান।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নবনির্বাচিত ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) নির্বাহী কমিটির নেতা ও সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দূতাবাসের মাধ্যমে সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। পরে বিকালে মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস বলেন, লিবিয়ায় কোনো বাংলাদেশী আটক বা জিম্মি অবস্থায় নেই। লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এটা নিশ্চিত করেছেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, লিবিয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশীদের অবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।
লিবিয়া থেকে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ ব্যাপারে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। লিবিয়ায় এখন ঘোলাটে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি অনুকূল হলে বাংলাদেশীদের সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, লিবিয়া থেকে বাংলাদেশীদের তৃতীয় কোনো দেশে নয়, বাংলাদেশেই ফিরিয়ে আনা হবে। তবে পররাষ্ট্র সচিব স্বীকার করেন, অন্য বিদেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশীরাও আক্রমণের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত এইচএল আলী ইমাম গাদ্দাফীর পক্ষ ত্যাগ করে পদত্যাগ করেছেন। তার এই সিদ্ধান্তের কথা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।