Friday, February 18, 2011

লিবিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, নিহত ৪: গাদ্দাফির আসন টলে উঠেছে




লিবিয়ার সরকারবিরোধীরা গতকাল দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। তবে এই বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী দমন-পীড়ন চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।

তিউনিসিয়া ও মিসরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সাফল্যে অনুপ্রেরণা নিয়ে লিবিয়ানরাও সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিল। এ বিক্ষোভের মধ্যদিয়ে গাদ্দাফির আসন টলে উঠেছে। ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে ‘বিক্ষোভের দিন’ পালনের আহ্বান জানায় আন্দোলন সংগঠকরা।
লিবিয়ার দুই বড় শহর বেনগাজি ও বেইদায় এক আইনজীবীকে গ্রেফতারের খবরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষও হয়। বুধবার দিনের শেষভাগে বেইদায় দু’জন নিহত হয়েছে বলে বিবিসি নিশ্চিত করেছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় বেনগাজি শহরে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়। সরকারের কড়া সমালোচক হিসেবে খ্যাত আইনজীবী ফাতিহ তারবিলকে গ্রেফতারের খবরে ওই দু’শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে তারবিলকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে বহু লোককে আটক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। ১৯৯৬ সালে ত্রিপলির আবু সালিম কারাগারে ১ হাজার বন্দি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার হয়। নিহত ওই ১ হাজার বন্দির পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আইনজীবী তারবিল।
বুধবার সন্ধ্যায় দেয়া এক ভাষণে কর্নেল গাদ্দাফি বিক্ষোভ সম্পর্কে কিছু না বললেও ‘বিপ্লবীরা’ জয়ী হবে বলে মন্তব্য করেন। গাদ্দাফি বলেন, ‘সর্বত্র শত্রুর পতন হোক, পুতুলদের পতন হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল, ইহুদিবাদের পুতুলদের পতন ঘটছে।’ বেনগাজির সহিংসতার পর এক বিবৃতিতে লিবিয়ার এক শীর্ষ কর্মকর্তা হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ একদল মানুষকে রাতের বেলায় একসঙ্গে চলাচল করতে দেবে না। লিবিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা সহ্য করা হবে না।’ লিবিয়ায় নিষিদ্ধ ঘোষিত এক ইসলামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর শতাধিক সদস্যকে বুধবার আবু সালিম কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। তবে তাদের মুক্তির সঙ্গে বেনগাজির বিক্ষোভ-সংঘর্ষেও কোনো যোগসূত্র রয়েছে কিনা—এ বিষয়টি নিশ্চিত নয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেয়ার জন্য লিবিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইইউ’র মুখপাত্র ব্যারোনেস অস্টন বলেন, ‘সব ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে সহিষ্ণুতা প্রদর্শনেরও আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’ কর্নেল গাদ্দাফি আরব বিশ্বের নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় ১৯৬৯ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন গাদ্দাফি।
ন্যাশনাল কনফারেন্স ফর দ্য লিবিয়ান অপজিশনসহ অন্য বিরোধী সংগঠনের আহ্বানে বিক্ষোভ দিবসের দু’দিন আগে থেকেই রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ শুরু করে জনতা। সূত্র : দ্য ডেইলি কস, বিবিসি অনলাইন
ফেসবুকের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইটগুলোর তথ্য অনুযায়ী লিবিয়ার বিক্ষোভের সূচনা হয় বেনগাজি শহর থেকে। ২০০৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এ শহরেই পুলিশের হাতে নিহত হয় ১৮ বিক্ষোভকারী। দিনটি স্মরণে প্রত্যেক বছর দেশটিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি ‘বিক্ষোভ দিবস’ পালন করে আসছে।
আর এ দিবসকে ঘিরে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ওয়েবসাইটে বিষয়টি নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা চলতে থাকে। এরই সূত্র ধরে দেশটির প্রশাসনবিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে। বিরোধীদলীয় বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতারও করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—২০০৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের অন্যতম আয়োজক ফারাজ আহমিদ এবং তার পরিবারের অন্য সদস্য। মঙ্গলবার লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলির আবু সালিম কারাগারের বন্দি হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর ফাতিহ তারবেলের গ্রেফতারের খবর দ্রুত মুঠোফোন ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদে নিহত বন্দিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অন্য বিক্ষুব্ধরাও রাজপথে নেমে আসে।