Friday, February 18, 2011

হামির পদবাহরাইনে বিক্ষোভ অব্যাহত যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী আল ত্যাগ




বাহরাইনে গতকাল হাজার হাজার মানুষের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। গত দু’দিনে পুলিশের গুলিতে ছয় বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর সেখানে আন্দোলন নতুন মোড় নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। হাজার হাজার প্রতিবাদী মানুষ বুধবার বাহরাইনের রাজধানী মানামার পার্ল রাউন্ডঅ্যাবাউট চত্বরে অবস্থান করেন। কেউ কেউ বলছেন, মিসরের তাহরির চত্বরের মতো বাহরাইনের এ চত্বরও সরকারবিরোধী বিক্ষোভে বিশেষ পরিচিতি লাভ করতে পারে। তবে গতকালের সমাবেশ অনেকটা শান্তিপূর্ণ বলে সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী খলিফা বিন সালমান আল খলিফার পদত্যাগ ও সব ধরনের বৈষম্য অবসানের জন্য সংবিধান সংশোধনের দাবিতে স্লোগান দেন। এছাড়া গতকাল নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে সেখানে নতুন করে শোক মিছিলের আয়োজন করা হয়। তবে পুলিশ তাতে কোনো ধরনের বাধা দেয়নি। বুধবার শোক মিছিলে ছোড়া পুলিশের গুলিতে দু’জন নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে দেশটির বিরোধী দল সংসদ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। বাহরাইনের জাতীয় সংসদে ৪০ আসনের মধ্যে বিরোধী দলের ১৮টি আসন রয়েছে। গতকালের হত্যাকাণ্ডের পর বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ঈসা-আল খলিফা নজিরবিহীন শোক প্রকাশ করেছেন। তবে বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এটা নিতান্তই কম এবং এতে আন্দোলন কর্মসূচি বন্ধ করা হবে না। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে হামাদ বিন ঈসার পরিবার শাসন কাজ পরিচালনা করে আসছে এবং সমাজে নানা দুর্নীতি ও অনাচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব দুর্নীতির অবসান, রাজনৈতিক সংস্কার ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের দাবিতে বিরোধী দল এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো আন্দোলন শুরু করেছে। এছাড়া দেশটির শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ শিয়া সম্প্রদায়ের হলেও তারা নানাভাবে বৈষ্যম্যের শিকার হন। এদিকে বাহরাইন পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন সরকার বিবৃতি দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ফিলিপ ক্রাউলি বাহরাইন সরকার ও বিক্ষোভকারী দু’পক্ষকেই সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বাহরাইনে মার্কিন নৌ ও বিমান ঘাঁটি রয়েছে। এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগে বাহরাইনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. ফয়সল আল হামির পদত্যাগ করেছেন। গতকাল দুপুরে তিনি এ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ বিষয়ে বাহরাইনের সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে তাত্ক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এর আগে রাজধানী মানামার পার্ল স্কয়ারে বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেয়ার সময় পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে তিন বিক্ষোভকারী নিহত হন। অপর দিকে পার্লামেন্টে শিয়া প্রধান বিরোধী ওয়েফাক পার্টির সংসদ সদস্য ইব্রাহিম মাত্তার নিহতের ঘটনা নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘আমি সেখানে ছিলাম। লোকজন দৌড়ে পালাচ্ছিল। এটা নিশ্চিত, দু’জন নিহত হয়েছেন। আরও অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ গত কয়েক দিন ধরে বাহরাইনের রাজধানী মানামায় বিক্ষোভের ফলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। মিসরের পর আরব অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে একে একে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়লে বাহরাইনের মানবাধিকার কর্মীরা গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বাহরাইন স্কয়ারে সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দেয়। বিক্ষোভ দমনে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে দেশটির দাঙ্গা পুলিশ।

এ ঘটনায় রাজধানী মানামায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং আটককৃত শত শত শিয়া মুসলিমের মুক্তি, নাগরিক অধিকার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে বিক্ষোভকারীরা।