Saturday, February 19, 2011

বাহরাইনের বাদশাহকে উচ্ছেদের অঙ্গীকার

বাহরাইনে হাজার হাজার শোকার্ত বিক্ষোভকারী ক্ষমতাসীন বাদশাহকে উচ্ছেদের অঙ্গীকার করেছেন। সেনাবাহিনীর দমন অভিযানে ৪ জন নিহত হওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর জানাজায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। শোকাহতরা ব্যানার হাতে নিয়ে সরকার পতনের স্লোগান দেন। অনেকেই বলেছেন, পরিবর্তনের জন্য তারা জীবন দিতে প্রস্তুত। মানামার রাজপথের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্যাঙ্ক মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে পাশ্চাত্য বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলায় ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানায় তারা।
রাজধানী মানামা এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। বিক্ষোভে ৪ জনের মৃত্যুর পর আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক দেশ বাহরাইনের পরিস্থিতি। সরকারপন্থিরাও একই দিন পাল্টা মিছিল বের করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সরকার সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এ কারণে আরও সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। শত শত বিক্ষোভকারীকে রাজপথ ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। মানামার রাস্তায় সেনাবাহিনী ও ট্যাঙ্ক নেমেছে। বিক্ষোভকারীদের ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা যা করা দরকার সেনারা তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা এবং সহিংসতার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দশ লাখেরও কম জনসংখ্যার দেশ বাহরাইন খুব ছোট হলেও সামরিক কৌশলগত দিক দিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন নৌবাহিনীর পঞ্চম নৌবহরের সদর দফতর এখানে রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ খালেদ বিন আহমেদ আল খলিফাকে ফোনে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। শুক্রবারের শবযাত্রা যাতে কোনো প্রকার সহিংস ঘটনায় পণ্ড হয়ে না যায় তা নিশ্চিত করতে তাগিদ দিয়েছেন তিনি। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পর বৃহস্পতিবার থেকে মানামার রাস্তায় রাস্তায় ভারী অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নিয়ে টহল দিচ্ছে সশস্ত্রবাহিনী।
বাহরাইনের প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৫০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা তাদের ওপর তলোয়ার, ছুরি ও ড্যাগার নিয়ে হামলা চালায়। বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আরও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর লক্ষ্যে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। মানামার কেন্দ্রস্থল পার্ল স্কয়ারে সোমবার থেকে অবস্থান নেয়া বিক্ষোভকারীদের ওপর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর রাত তিনটার দিকে হামলা চালায় দাঙ্গা পুলিশ। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে তাড়ানো হয়। সুন্নি মুসলিম শাসিত বাহরাইনে সাংবিধানিক সংস্কার, রাজনৈতিক বিবেচনায় বন্দিদের মুক্তিসহ একজন নাগরিকের যেসব স্বাভাবিক অধিকার হরণ করা হয়েছে তার অবসানের দাবিতে মূলত শিয়া মুসলিমরা এই আন্দোলন শুরু করে। পার্ল স্কয়ারে পুলিশের মারমুখী অভিযান প্রসঙ্গে দেশটির প্রধান বিরোধী দল শিয়াপন্থি ওয়েফাক পার্টি জ্যেষ্ঠ সদস্য আবদুল জলিল খলিল রয়টার্সকে বলেন, এটা স্বৈরতন্ত্র। তারা হত্যার লক্ষ্যেই আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফয়সাল বিন ইয়াকুব আল হামের বলেন, পুলিশের অভিযান চলাকালে ৩ জন নিহত ও ২৩১ জন আহত হয়েছে। বিরোধীদলীয় এক আইনপ্রণেতা বলেন, গুরুতর আহত অপর একজন মারা গেছে। এর আগে পুলিশের ওই অভিযান সম্পর্কে বাহরাইনের বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা ইব্রাহিম মাত্তার বলেন, আমি সেখানে ছিলাম। মানুষ দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে ছুটাছুটি করছিল। কিন্তু নারী ও শিশুদের জন্য বিষয়টি সহজ ছিল না। তাদের কেউ কেউ তখনও চত্বরের ভেতরেই ছিল। ইব্রাহিম মাত্তার বাহরাইরেন শিয়াপন্থি প্রধান বিরোধী দল ওয়েফাক পার্টির একজন আইনপ্রণেতা। ওয়েফাক পার্টির সাধারণ সম্পাদক শেখ আলি সালমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা কোনো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র চাই না। আমরা গণতন্ত্র চাই, যেখানে জনগণই সকল ক্ষমতার উত্স। আর তা করতে হলে নতুন সংবিধান প্রয়োজন। বাহরাইনের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন দমনের পরিবর্তে সংস্কারের আহ্বান জানান। জাতিসংঘে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জনগণের ক্ষমতায়ন, দায়িত্বশীল সরকার এবং সার্বিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি সম্ভব।
এদিকে বৃহস্পতিবার ফোনে বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ খালিদ বিন আহমেদ আল- খলিফার সঙ্গে আলাপকালে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। এ সময় তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানান। তবে বিক্ষোভকারীদের ওপর দাঙ্গা পুলিশের আকস্মিক হামলার প্রতিবাদে সংসদ থেকে পদত্যাগ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে দেশের বিরোধী শিয়া দল।
এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সকালে মানামা স্কয়ারে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনসহ রাস্তা বন্ধ করে তল্লাশি কেন্দ্র বসানো হয়। এ সময় স্কয়ারে ডজনের বেশি সেনা যানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘দেশে নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে।’ তবে একইসঙ্গে জনগণকে বাহরাইনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জড়ো না হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।