Saturday, February 19, 2011

ক্রিকেট বিশ্বযুদ্ধ আজ শুরু : প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত


স্বাগতিক বাংলাদেশ আর হট ফেভারিট ভারতের মধ্যকার ম্যাচ দিয়েই শুরু হচ্ছে আসরের বিশ্বকাপ ক্রিকেট। মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের যেখানে আছে সুখস্মৃতি, সেখানে ভারতকে এখনও তাড়া করছে গত বিশ্বকাপের দুঃখস্মৃতি। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের কাছে ৫ উইকেটে হেরেছিল ভারত। আর সেই হারেই বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয় গতবারের অন্যতম হট ফেভারিট ভারতকে।
এ বিশ্বকাপের ফরম্যাটে পরিবর্তন জানা হয়েছে। ‘বি’ গ্রুপে ভারত, বাংলাদেশের সঙ্গে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, হল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড। গত বিশ্বকাপের মতো প্রথম ম্যাচ হারলেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়ার ভয় নেই ভারত-বাংলাদেশ কারও। এমনকি গ্রুপে নিজেদের টানা প্রথম তিন ম্যাচ হারলেও পরের তিন ম্যাচে জিতে গ্রুপের চতুর্থ দল হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে দু’দলেরই। সেসব দিক বিবেচনায় নিলে প্রথম ম্যাচটাকে দু’দলের বিশ্বকাপের ‘ওয়ার্মআপ’ ম্যাচও বলা যায়। কিন্তু আসলে তা নয়। ভারত-বাংলাদেশ দু’শিবিরই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটাকে দেখছে অন্য মর্যাদায়। ম্যাচটাকে ঘিরে দু’দলের মধ্যেই ভর করছে অনন্ত চাপ। বাংলাদেশ চাইছে, গত বিশ্বকাপের সুখস্মৃতির পুনরাবৃত্তি। আর ভারতের লক্ষ্য একটাই, যে কোনো মূল্যে গতবারের দুঃখস্মৃতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে ম্যাচটাকে জিতে নেয়া। সাকিব বাহিনীর ওপর আছে ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশার চাপ। অন্যদিকে ধোনি বাহিনীর ওপর আছে ১০০ কোটির বেশি মানুষের চাপ। তাতে পরিষ্কার বোঝা যায় আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ নয়, ভারতের ওপরই চাপটা আছে বেশি।
তবে সার্বিক বিচারে আজকের ম্যাচে পরিষ্কার ব্যবধানে ফেভারিট ভারত। বাংলাদেশ-ভারত এ পর্যন্ত একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুখোমুখি হয়েছে ২২ বার। তাতে ভারতের জয় ২০ বার। বাংলাদেশ মাত্র দুইবার জিতেছে। তবে বিশ্বকাপের পরিসংখ্যানে এগিয়ে আছে স্বাগতিক বাংলাদেশই। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ৩৬ বছরের ইতিহাসে এ দু’দল একবারই মুখোমুখি হয়েছে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশ ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে। তবে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা হচ্ছে বর্তমান দলটি। টেস্ট ক্রিকেটে ভারত বিশ্বসেরা। ওয়ানডেতে আছে র্যাঙ্কিং-এ দুই নম্বরে। শচীন, সেহওয়াগ, গৌতম গম্ভীর, বিরাট, কোহলি, যুবরাজ সিং, সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিং ধোনি ও ইউসুফ পাঠানোর মতো মারকুটে ব্যাটসম্যান আছে ভারতীয় দলে। বোলিং আক্রমণে আছে জহির খান, আশীষ নেহরা, হরভজন সিং, পিযুষ চাওলা, শ্রীশান্ত ও মুনাফ প্যাটেলের মতো বোলার। দলটির মূল শক্তি তাদের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং গভীরতা। বর্তমান বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইনআপ হচ্ছে ভারত। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যদি একবার পার্টনারশিপ গড়তে পারেন, তাহলে তা কত ভয়ঙ্কর হয় তার উদাহরণ আছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটেই। বিশ্বকাপের এখন পর্যন্ত সেরা তিনটি পার্টনারশিপই গড়েছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সৌরভ গাঙ্গুলী ও রাহুল দ্রাবিড় ৩১৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ছিলেন। ২০০৩ বিশ্বকাপে নামিবিয়ার বিপক্ষে ২৪৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন শচীন-সৌরভ জুটি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ২৩৭ রানের অপরাজিত পার্টনারশিপ গড়েন টেন্ডুলকার-দ্রাবিড় জুটি। প্রতিপক্ষ ছিল কেনিয়া। বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ৩-২ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারলেও ভারতীয় দল আছে ভালো ফর্মে। আজ দিবারাত্রির ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়ার আগে নিজেদের মাটিতে দুটো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে এসেছে ভারত। তাতে ধোনির দল প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৩৮ রানে, দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ১১৭ রানে হারিয়ে বেশ চাঙ্গা।
অন্যদিকে স্বাগতিক বাংলাদেশ দলও আছে মানসিকভাবে বেশ শক্ত অবস্থানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে ওয়ানডে র্যাঙ্কিং-এ পেছনে ফেলে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভালো ক্রিকেট খেলছে টাইগাররা। নিজেদের মাটিতে গত নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে ওয়ানডে সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে হোয়াইট ওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে ওয়ানডে ম্যাচে সিরিজ হারিয়েছে। জয় পেয়েছে ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে। তাছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেট লীগ শেষ করায় ক্রিকেটাররা ম্যাচের মধ্যেই ছিল। তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ দল বেশ ব্যালান্সড। তামিম, সাকিব, ইমরুল, জুনায়েদ, রাকিবুলের মতো ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি শফিউল, রুবেল, রাজ্জাক, সাকিবের মতো বোলারও আছেন বাংলাদেশ দলে। বাংলাদেশ দলের মূল শক্তি স্পিন বোলিং। দলে আছেন তিনজন বাঁহাতি স্পিনার। স্পিন বলের বিপক্ষে বরাবরই ভালো ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। এছাড়া দলে বেশ কয়েকজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকায় বাংলাদেশের স্পিন অ্যাটাক সামলাতে বেগ পেতে হবে না তাদের। ইনজুরির কারণে বাংলাদেশের সেরা বোলার মাশরাফির এ বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না। গত বিশ্বকাপে তামিম, সাকিব আর মুশফিকের ব্যাটে ভর করেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে ভারতীয় শিবিরে আসল আঘাতটা করেছেন মাশরাফিই। ৯.৩ ওভার বল করে ২টি মেডেন দিয়ে মাত্র ৩৮ রানে ভারতের চারটি উইকেট নেন এ পেসার। ভারতের টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান গাঙ্গুলী, সেহওয়াগ, রবীন উথাপ্পাকে সাজঘরে দ্রুত পাঠানোয় ৪৯.৩ ওভারে মাত্র ১৯১ রানেই গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস।
এ বিশ্বকাপে মাশরাফির অভাবটা বেশ তীব্রভাবেই অনুভব করবে বাংলাদেশ। আজকের ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হওয়ার আগে সাকিব বাহিনী দেশের মাটিতে দুটো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রামে কানাডাকে তামিমের ঝড়ো ইনিংসে ভর করে ৯ উইকেটে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু মিরপুরে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচেই ব্যাটিং ব্যর্থতায় পাকিস্তানের কাছে ৮৯ রানের বড় ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করা পাকিস্তান নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮৫ রান করেছিল। ম্যাচে অধিনায়ক সাকিব ৪৯ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট পান। বাংলাদেশ অধিনায়ক পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে মোট ৯ জন খেলোয়াড়কে ব্যবহার করে রানের চাকা থামাতে পারেননি। ম্যাচে মাশরাফির অভাবটা তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যর্থতা কাটিয়ে আজ ভারতের বিপক্ষে নতুন উদ্যমে মাঠে নামবে টাইগাররা। মিরপুর স্টেডিয়ামে দিবা-রাত্রির এ ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায়।
আজকের ম্যাচকে সামনে রেখে গতকাল ভারত-বাংলাদেশ দু’দলই সকালের সেশনে মিরপুর স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছে। মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী দু’দলকেই বেশ উজ্জীবিত মনে হয়েছে। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে দু’দলই ম্যাচজয়ের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘জয়ের জন্যই আমরা মাঠে নামব। শুধু আজকের ম্যাচ নয়, আমরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ নিয়েই ভাবছি। মাশরাফি দলের সেরা বোলার। মাশরাফিকে মিস করবে বাংলাদেশ।’ অন্যদিকে ভারতীয় দলনেতা মহেন্দ্র সিং ধোনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ভালো দল। দলে বেশ কয়েকজন ভালো স্পিনার আছেন। গত বিশ্বকাপের কথা মনে করতে চাই না আমরা। ম্যাচ জেতার জন্যই মাঠে নামবে আমার দল।’
মিরপুর স্টেডিয়ামে এর আগে পাঁচবার খেলেছে বাংলাদেশ-ভারত। সবক’টি ম্যাচই জিতেছে ভারত। ব্যাটিং সহায়ক এ উইকেটে টসজয় গুরুত্বপূর্ণ হবে। আগে ব্যাট করা দল সুবিধা পাবে। রাতে কুয়াশা পড়লে রান তাড়া করা কঠিন হবে। ম্যাচে জেতার জন্য আগে ব্যাট করা দলকে অন্তত ২৭০/২৮০ রান করতেই হবে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের এমনই অভিমত। আজকের ম্যাচের আগে কেউই চূড়ান্ত একাদশের নাম ঘোষণা করেনি। তবুও নিচে দু’দলের সম্ভাব্য একাদশের তালিকা দেয়া হল—
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ : সাকিব-আল-হাসান (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল (সহ-অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, জুনায়েদ সিদ্দিকী, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাঈম ইসলাম, রকিবুল হাসান, আবদুর রাজ্জাক, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম ও মুশফিকুর রহিম।
ভারতের সম্ভাব্য একাদশ : মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক), বীরেন্দ্রর সেহওয়াগ (সহ-অধিনায়ক), পিযুষ চাওলা, গৌতম গম্ভীর, হরভজন সিং, জহির খান, বিরাট কোহলি, মুনাফ প্যাটেল, ইউসুফ পাঠান, সুরেশ রায়না ও শচীন টেন্ডুলকার।